বই পড়ার 10 টি উপকারীতা
“If you have a garden and a library, you have everything you need.”
_ Marcus Tullius Cicero
রোমান পণ্ডিত Marcus Tullius Cicero এর এই বিখ্যাত উক্তির মধ্যে দিয়ে বইপড়ার প্রয়োজনীয়তা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা অতুলনীয়। যদি আপনার একটি বাগান (খাদ্যের জন্য) ও একটি লাইব্রেরী (পড়ার জন্য) থাকে তবে আর কি প্রয়োজন আছে? আপনার শারীরিক ও মানসিক সব সুখের উৎস হতে পারে নিয়মিত বই পড়া। তাই আজই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, আপনার রুচি অনুযায়ী পছন্দের বই কিনুন আর গড়ে তুলুন আপনার নিজস্ব জগৎ।
“একটি ভালো বই হলো বর্তমান ও
চিরকালের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বন্ধু” ....টুপার
১, মস্তিস্কের সবথেকে উত্তম ব্যায়াম হল বইপড়া –
শরীরকে যেমন
সুস্থ রাখতে আমাদের শরীর চর্চা, ব্যায়াম, হাতা-চলা
ইত্যাদি করতে হয়, তেমনি
মস্তিস্ককে সুস্থ ও কর্ম ক্ষম রাখার উত্তম পন্থা হল বইপড়া। বই পড়লে আমাদের
মস্তিস্কের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। কেননা ভালো বই পড়ার আনন্দ, বই এর কোন চরিত্র বা ঘটনার উত্তেজনা-রহস্য
ইত্যাদি মস্তিস্কের কোশে কোশে বিরাট উদ্দিপনার সৃষ্টি করে। ফলে সাধারণ অবস্থায়
আমাদের মস্তিস্ক যতটা ক্রিয়াশীল থাকে, বই পড়ার সময় তা অনেক গুন বৃদ্ধি পায় – ফলে আমাদের মস্তিস্ক অনেক বেশি সুস্থ সবল হয়ে
ওঠে।
“অন্তত ষাট হাজার বই না থাকলে
জীবন অচল” _ নেপোলিয়ান বোনাপার্ট।
২, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায় ও Alzheimer রোগ প্রতিরোধ করে –
সাধারণত শুয়ে-বসে বা অলসভাবেঅ জীবন কাটালে আমরা আমদের মস্তিস্কের সত্যিকার ক্ষমতাকে কাজে
লাগাতে পারিনা। পরিবর্তে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে আমাদের মস্তিস্কের
গঠনমূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়, ফলে মস্তিস্ক সবল হবার সাথে সাথে আমাদের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
এই স্মৃতি
শক্তিকে সবল করতে পারলে আপনি পরবর্তিকালে Alzheimer বা স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার মত মারাত্মক রোগের
হাত থেকে অনেকাংশে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। অনেক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে যে, যে সব ব্যাক্তিরা নিয়মিত বই পড়েন তাদের মধ্যে
এই রোগের প্রবণতা খুবই নগন্য।
“জীবনে তিনটি জিনিস প্রয়োজন – বই, বই এবং বই” _ডাঃ শহীদুল্লাহ।
৩, আয়ু বৃদ্ধি করে –
একাধিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যারা নিয়মিত বই পড়েন তাদের গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়। বই পাঠ মানুষকে সুখি করে তোলে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর আপনার নিজস্ব লাইব্রেরির নিভৃতে পছন্দের বই পড়ার সুখে ডুবে যাওয়া – এক পরম বা স্বর্গীয় শান্তির ব্যাপার। এ এক এমন জিনিস যা আপনার মানসিক প্রশান্তিকে উচ্চ স্তরে পৌঁছে দেয়। আপনার শারীর ও সেই সুখের আবেশে অনেক সুস্থ-সবল হয়ে ওঠে। এই যে দেহমনের সুখানুভূতি আপনার শরীরের কোশের অন্তরতম স্থানে পৌছায় – যা একটি পরিপূর্ন সুস্থতা দান করে, তাই দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার জন্য বই পড়ার অভ্যাস করুন।
"Books are uniquely portable magic" _ Stephen
King
৪, ভালো ঘুমের পক্ষে সহায়ক –
যদি রাতে
ঘুমাতে যাবার ২/১ ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন – তা আজই বর্জন করুন। কারন এগুলি নির্গত রশ্মি(Blue
Rays) আমাদের
স্নায়ুকেন্দ্রকে নানাভাবে বিশৃঙ্খল করে তোলে। ফলে আমাদের মানসিক প্রশান্তি ব্যাহত
হয়। ফলে সহজে ঘুম আসতে চাইনা বা এলেও ভালো ঘুম (Sound Sleep) যাকে বলে তা হয়না।
পরিবর্তে
ঘুমাতে যাবার ১ ঘণ্টা আগে থেকে যদি আপনি নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করেন – তা আমাদের শরীর ও মন দুটোর পক্ষেই খুবই
উপকারী। আপনি শুয়ে বা বসে যেভাবে খুশি বই পড়ুন। শুধুমাত্র পড়ার স্থানে উপযুক্ত আলো
রেখে বাকী সব আলো নিভিয়ে দিন। এতে আপনার বই এর প্রতি একাগ্রতা বাড়বে। পড়া শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার মন ও মস্তিস্ক শান্ত হয়ে উঠবে, ফলে আপনি সহজেই ঘুমিয়ে পড়বেন এবং অবশ্যই একটি
গভীর ঘুম হবে।
“বই ছাড়া একটি ঘর আত্মা ছাড়া দেহের মত” _
Mark Tulias Cecero
৫, মানসিক শান্তি আনে –
বই পড়লে সহজেই
ক্লান্তি, অবসাদ, হতাশা ইত্যাদি সব ভয়ানক ব্যাধি গুলিকে দূরে
সরিয়ে রাখা যায়। ভালো মানের বা পছন্দসই কোন বইয়ের মধ্যে যখন আমরা ডুবে যায় তখন
আমাদের কল্পনাশক্তি ও মস্তিস্কের কার্যক্রম বহুগুন বেড়ে যায়। যা আমাদের মস্তিস্কে Positive প্রভাব ফেলে – ডোপামিন (Feel good hormone) এবং সেরোটোনিন ( Happiness
hormone) ইত্যাদি সব
ভালো হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে – যা আমাদের অবসাদ-দুশ্চিন্তা-ক্লান্তি ইত্যাদি দূর করে মানসিক প্রশান্তি আনে।
“আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি”। _ ভিনসেন্ট স্টারেট
৬, অনেক রোগের প্রকোপ দূর করে –
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, বই পড়া শুরু করার ৩০ মিনিটের মধ্যে রক্তের চাপ(Blood Pressure), অনিয়মিত হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এছাড়া আমাদের রোজকার দিনের চাপ, হতাশা, Depression, Job Satisfaction না থাকা ইত্যাদি যে আমাদের শরীরে নানা রোগের আমন্ত্রণ জানায় তা আমাদের জীবনযাত্রাকে পঙ্কিল করে তোলে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য দরকার একটি সুস্থ-সহজ-সাধারনমানের জীবনযাত্রা। আর সেই জীবনযাত্রার সঠিক সন্ধান দিতে পারে একমাত্র জ্ঞান – যারজন্য আমাদের নিয়মিত বই পড়া উচিত।
“খুব কম বয়সেই বই পড়ার প্রতি
আমার ঝোঁক তৈরি হয়। শিশু হিসাবে আমার বাবা-মাও বই কিনতে আমাকে ইচ্ছামত টাকা দিতেন।
তাই আমি প্রচুর বই পড়তাম” _ বিল গেটস।
৭, বই আত্মোন্নতির সহায়ক হয় –
সকল বিখ্যাত ও
সফল ব্যাক্তিদের সফলতার অন্যতম হাতিয়ার হল বই। বই এর জ্ঞান, জীবন দর্শন, সমস্যা সমাধানের নানা উপায় ও সফল ব্যাক্তিদের
অভিজ্ঞতা আপনাকে অনেকাংশে Perfect করে তোলে। ফলে চলার পথে যে কোন সমস্যার আপনি অনায়াস সমাধান করতে পারেন। আপনার
জ্ঞান, মানসিক দৃঢ়তা, সহনশীলতা সংসার-সমাজ-কর্মজীবনে আপনাকে অনন্য
করে তোলে।
“বই পড়াকে যথার্থ হিসাবে যে
সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়”। _ শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
৮, বই মানুষকে আরো বেশি সামাজিক করে তোলে –
আপনি যদি
নিয়মিত একজন পাঠক হন, তাহলে অবশ্যই
আপনি আরো বেশি সামাজিক হয়ে উঠবেন। বই থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা আপনার মনের জানালা
খুলে দিতে সাহায্য করবে। আপনি তখন আকাশ, বাতাস, নদী, পাহাড়, গাছপালা, আপনার আশেপাশের সবাইকে ভালোবাসতে শিখবেন।
আপনার মন আকাশের মত উদার হয়ে উঠবে। এই যে আরো বেশি করে সামাজিক হয়ে ওঠা আপনার
দেহ-মনের সুস্থতার পক্ষেও দারুণ উপযোগী। যারা বেশি সামাজিক হয় তাদের গড় আয়ুও বেশি
হয়। সামাজিকতা আমাদের মনে পরম প্রশান্তি সৃষ্টি করে, স্ট্রেস দূর করে। বিশিষ্ট লেখক Hector
Gargia এবং Francesc Miralles তাদের 'IKIGAI' নামক বইতে জাপানের OKINAWA দ্বীপের অধিবাসীদের দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার
রহস্য উদঘটন করতে গিয়ে দেখেছেন তাদের জীবনযাত্রার পথ চলে অনেকটাই সামজিক নিয়মে এবং
সমাজের একে অপরকে সাহায্য করার মধ্যে দিয়ে। শুধু ব্যাক্তিগত স্বার্থের কথা চিন্তা
আমাদের মনকে সংকীর্ণ করে তোলে, আমাদের মস্তিষ্কে বিরুপ বার্তা পাঠায় – যার প্রভাব আমাদের মনেও পড়ে।
“যে বই পড়েনা তাঁর মর্যাদা বোধ
জন্মে না” - পিয়ারসন স্মিথ।
৯, বই মানুষকে সুখি করে তোলে -
বই মানুষের
মনে গভীর প্রশান্তি এনে মানুষকে সুখি করে তোলে। তাছাড়া বইয়ের স্পর্স, বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদি সব অনন্য সব অনুভূতি আপনার মনে
সৃস্টি করে। তার সাথে আপনার সংগ্রহ করা বই আপনার কাছে মহামূল্যবান হীরা-জহরতের মনে
হয়। সারাদিনের মধ্যে যখন এগুলি দেখেন বা এগুলির কথা মনে করেন তখন আপনার মনে এক Positive
feelings আসে – যা আপনার মানসিক প্রশান্তি আনে ও আপনাকে সুখি
করে তোলে।
“একটি বই পড়ার দুটি উদ্দেশ্য
থাকা উচিৎ। একটি হল – বইটিকে উপভোগ করা,অন্যটি হল – বইটিকে নিয়ে গর্ব করতে পারা”। বাট্রার্ন্ড রাসেল
১০, Bibliotherapy বা Booktherapy –
সুন্দর কোন
গল্প, কবিতা, কোন ব্যাক্তির জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার ঘটনা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি পাঠ করে শুনিয়ে অনেক সময়
কোন কোন ব্যাক্তির মানসিক নানা সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়। প্রাচীন কাল থেকেই
প্রচলিত এই পদ্ধতির কথা গ্রিক ঐতিহাসিক Doriodous রচনায় উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজাদের ‘The
House of Healing’ নামে এক কক্ষ থাকত, যেখানে অনেক
বই রাখা থাকত। World War I and II - এর সময় আহত, অঙ্গ হারানো অনেক মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া
সৈনিকদের অনেকাংশে সুস্থ করে তোলা হয়েছে এই পদ্ধতির দ্বারা। এই বিষয়ে Samuel
Rush, McChord Crothers,Peterson Delamey প্রমুখ ব্যাক্তিরা গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রেখেছেন।
Be Happy! Make an own library.
একাধিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যারা নিয়মিত বই পড়েন তাদের গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়।
বই পাঠ মানুষকে সুখি করে তোলে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর আপনার নিজস্ব
লাইব্রেরির নিভৃতে পছন্দের বই পড়ার সুখে ডুবে যাওয়া – এক পরম বা স্বর্গীয়
শান্তির ব্যাপার। এ এক এমন জিনিস যা আপনার মানসিক প্রশান্তিকে উচ্চ স্তরে পৌঁছে
দেয়। আপনার শারীরও সেই সুখের আবেশে অনেক সুস্থ-সবল হয়ে ওঠে। এই যে দেহমনের
সুখানুভূতি আপনার শরীরের কোশের অন্তরতম স্থানে পৌছায় – যা একটি পরিপূর্ন
সুস্থতা দান করে। তাই দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার জন্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা একান্ত
জরুরী। এই প্রয়াসকে স্বার্থক করে তোলার জন্য ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বই সম্পর্কে
আলোচনা শুরু করা হল।
আরো পড়ুন 👉 বই সম্পর্কে 50 টি বিখ্যাত উক্তি।
Please do not enter any spam link in the comment box