ঘোড়া নিয়ে লিখিত বিশ্ব সাহিত্যের কালজয়ী 3টি রচনা।
🐴 পশুদের জীবনযাত্রার খুঁটিনাটি ও তাদের সুখ-দুঃখ, অনুভূতি এবং তাদের সাথে জড়িত মানুষের ভালবাসা, মমত্ববোধ ইত্যাদি নিয়ে বিশ্ব সাহিত্যের অমর তিনটি রচনা Black Beauty by Anna Sewell, বিদায় গুলসারি by চিঙ্গিস আইৎমাতভ এবং পক্ষীরাজ-একটি ঘোড়ার গল্প by Leo Tolstoy এদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিচে দেওয়া হল।
- প্রথম রচনা – Black Beauty
- লেখক – Anna Sewell
- প্রকাশকাল – 1877
🐴 ব্রিটিশ লেখিকা Anna Sewell এর মৃত্যুর পর লেখাটি প্রকাশিত হয়। 49টি অধ্যায়ে বিভক্ত রচনাটি একটি ঘোড়ার আত্মজীবনী বলা চলে। এখানে first person এ Black Beauty নিজের জন্ম, পিতা-মাতা, জন্মস্থান, দরদী প্রথম মালিকের ব্যবহার, তার বড়ো হওয়া, কর্মজীবনে প্রবেশ, দুঃখ-যন্ত্রনা, মণিবদের নিষ্ঠুরতা ও তার করুণ পরিনতির কথা তুলে ধরেছে। বইটির ভাষা খুব সুন্দর।
🐴 বইটিতে ঘোড়ার জীবনের সুখ-দুখের কথা ছাড়াও তৎকালীন লন্ডনের ঘোড়ার গাড়ির চালকদের দূরাবস্থা, তাদের ওপর চাপানো বেশি মাত্রায় সরকারী কর, কম ভাড়া ইত্যাদি বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে। বইটি প্রকাশিত হবার পরপরই চালকদের মধ্যে আলোড়ন পড়ে যায়। প্রশাসন তাদের উন্নতির কথা ভাবে ও কর কম করে।
🐴 বইটি সারা পৃথিবীতে সব বয়সী পাঠকদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে আপনারা বইটি পড়তে চাইলে বিভিন্ন Online Store এ পেয়ে যাবেন।
- দ্বিতীয় রচনা – পক্ষীরাজ-একটি ঘোড়ার গল্প
- লেখক – Leo Tolstoy
- প্রকাশকাল -1885
🐴 লিও টলস্টয় তার এই অনবদ্য রচনায় একদিকে যেমন ঘোড়ার জীবনযাত্রা ও তাদের অনুভূতির খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন এক বুড়ো ঘোড়া পক্ষীরাজ এর মধ্যে দিয়ে, অন্যদিকে তীব্র কশাঘাত করেছেন মানুষের লোভ-লালসা-কামনা-বাসনার বিচিত্র প্রকাশকে।
🐴 জমিদার বাড়ির আস্তাবলে ১০০ এর বেশি ঘোড়াকে দেখাশোনা করেন নেস্তের ও ভাস্কা। এই আস্তাবলেই থাকে পক্ষীরাজ । সে বুড়ো বলে তার জোটে যত সব অনাদর, অবহেলা। আবার তার দলের অন্য জোয়ান ঘোড়া-ঘুড়ি রাও সুযোগ পেলেই তাকে বসায় কষিয়ে লাথি। সে যেন তাদের কৌতুক আমোদের পাত্র।সবকিছু দারুন কষ্ট নিয়ে সহ্য করে সে। কোন কিছুই যেন তার মনে দাগ কাটেনা – এমন তার মনোভাব। এভাবে চলতে চলতে একদিন তার সারাদেহে খোস-পাচড়া দেখা দেয়। যাতে অন্য ঘোড়াদের মধ্যে ছড়িয়ে না পরে তার জন্য পক্ষীরাজ কে অল্পদামে কসাই এর কাছে বেচে দেওয়া হয়। এসব দেখে শুনেও পক্ষীরাজ নিরুত্তাপ।এরপর তার গলায় ছুরি চালিয়ে দেওয়া হয়। দরদর করে ঝরে পড়ে গরম রক্ত, নেমে যায় যেন পক্ষীরাজ এর জীবনের সব দুঃসহ বোঝা।
🐴 পক্ষীরাজ রচনার শেষ দিকে লেখক দেখিয়েছেন অসুস্থ পক্ষীরাজের চামড়া, মাংস কোন কিছুই পড়ে থাকেনা, এমনকি হাড়গুলোও এক হাড়কুড়োনো বুড়ি নিয়ে যায় সার করার জন্য। আর মানুষ মরলে কি কাজে লাগে?
🐴 গল্পটি সমর সেনের অনুবাদে মস্কোর রাদুগা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। আপনারা বাংলা অথবা ইংরাজি যে কোন ভাষায় গল্পটি পড়ে নিতে পারেন। টলস্টয়ের রচনাবলী বা গল্পসমগ্র যে কোন বই এর দোকান বা বিভিন্ন Online Store এ পেয়ে যাবেন।
- তৃতীয় রচনা – বিদায় গুলসারি
- লেখক – চিঙ্গিস আইৎমাতভ
- প্রকাশকাল -1959
🐴 কিরঘিজস্তানের লেখক চিঙ্গিস আইৎমাতভ এর শ্রেষ্ঠ রচনা ‘বিদায় গুলসারি’। লেখাটিতে এক সোনালি রঙের ঘোড়ার জীবনকথার মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি এক স্তেপ অঞ্চলের জনজাতির জীবনযাত্রা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।গুলসারির হৃদয় বিদারক জীবন কাহিনি পড়ে শেষ করে যে কোন পাঠকই এক ঘোরের মধ্যে থাকতে বাধ্য।
🐴 গুলাসারি গল্পের ঘোড়াটির নাম, কিরঘিজ ভাষায় এর অর্থ সোনালি ঝুমকো ফুল। সুন্দর সোনালি রঙের লোমের জন্য তার এই নাম। February এর এক সন্ধ্যায় বুড়ো মালিক তানাবাই এর সাথে নির্জন এক পাহাড়ি টিলা অতিক্রম করতে গিয়ে বুড়ো ঘোড়া গুলাসারি তার মৃত্যুর ডাক শুনতে পায়। কি করবে ঠিক করতে না পেরে তানাবাই সেখানেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেই। বারবার গুলসারিকে আদর করতে থাকে। কিন্তু গুলসারি সে ডাকে সাড়া দিতে পারেনা। আসন্ন মৃত্যুর মধ্যে স্মৃতিতে ভেসে ওঠা গুলাসারির সারা জীবনের নানা সুখ দুঃখের কথার মধ্যে দিয়ে পুরো রচনাটি প্রকাশ পায়।
🐴 গুলাসারি মনে করতে পারে তার জন্ম, মায়ের কথা, মায়ের সুমিষ্ট দুধ- যা সে প্রান ভরে খেত, পাহাড়ি স্তেপে তার বড় হয়ে ওঠা, দুরন্ত গতির জন্য এলাকার সকলের নয়নের মনি হয়ে উঠেছিল সে, এরপর সরকারি আমলাদের নজর পড়ে তার ওপর এবং তার মালিকের কাছ থেকে তাঁকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় এসব তার মনে ভেসে উঠতে থাকে।তারপর তার দুঃখের জীবন শুরু হয় শেষে আবার বুড়ো ঘোড়ার গাড়ি চালক তানাবাই এর গাড়িতে খাটা এমন সব স্মৃতি গুলসারির মনে পড়ে। ওই রাতেই গুলসারি মারা যায়। বুড়ো তানাবাই এর মন ভেঙ্গে যায়। সকালে পাহাড়ের ওই নির্জন স্থানে তাঁকে রেখে ভারাক্রান্ত মনে সে স্থান ত্যাগ করে।
🐴 একটি ঘোড়ার হৃদয় বিদারক জীবন কাহিনির সাথে সাথে এই গল্পে তুলে ধরেছেন মহান সোভিয়েত বিপ্লবের চেতনা কীভাবে একসময় আমলাতন্ত্রের গোলোক ধাঁধায় হারিয়ে যায়।
🐴 অরুন সোমের অনুবাদে বইটি মস্কোর প্রগতি প্রকাশনী থেকে ‘পাহাড় ও স্তেপের আখ্যান’ নামে বার হয়। বর্তমানে বইটি আপনারা পুরোনো বই এর দোকানে খোঁজ করলে পেতেও পারেন। তবে অনেক Website-এ Pdf copy পাওয়া যায়, সেখান থেকে জোগাড় করেও পড়তে পারেন।
Note - প্রমানিত হয়েছে যারা নিয়মিত বই পড়েন তাদের গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়। বই পাঠ মানুষকে সুখি করে তোলে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর আপনার নিজস্ব লাইব্রেরির নিভৃতে পছন্দের বই পড়ার সুখে ডুবে যাওয়া – এক পরম বা স্বর্গীয় শান্তির ব্যাপার। এ এক এমন জিনিস যা আপনার মানসিক প্রশান্তিকে উচ্চ স্তরে পৌঁছে দেয়। আপনার শারীরও সেই সুখের আবেশে অনেক সুস্থ-সবল হয়ে ওঠে। এই যে দেহমনের সুখানুভূতি আপনার শরীরের কোশের অন্তরতম স্থানে পৌছায় – যা একটি পরিপূর্ন সুস্থতা দান করে। তাই দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার জন্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা একান্ত জরুরী। এই প্রয়াসকে স্বার্থক করে তোলার জন্য ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বই সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা হল।
আরও পড়ুন 👉 বই পড়ার অনন্য উপকারিতা।
Please do not enter any spam link in the comment box