আরতি ডোগরা জীবন কাহিনী ।। Arati Dogra Biography in Bengali
যদি আপনি পিছল রাস্তায় পড়ে যান পাঁচটা লোকে দেখে হাসবে - এটাই আমাদের সামাজিক বাস্তবতা। দুর্বল, অক্ষমদের প্রতি ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে বা আর্থিক/সামাজিকভাবে কেউ আমাদের থেকে পিছিয়ে আছে ভেবে আমরা মনে এক প্রকার কদর্য আনন্দ পাই। কিন্তু যারা এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যায়, তারাই সফল হয় বা সমাজে একটা দৃস্টান্ত স্থাপন করে। আজকে Notepage এর কলমে এমনই একজন মানবীর কাহিনী শেয়ার করব - যার কথা শুনে আপনারা উপকৃত হবেন এবং নিজ, সমাজ তথা দেশের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা পাবেন। এই মানবীর নাম হল আরতি ডোগরা। যিনি তাঁর স্বল্প উচ্চতার জন্য [মাত্র 3.4 ফুট ] অনেক বিদ্রুপ সহ্য করেছিলেন, কিন্তু যখন IAS পাশ করে IAS অফিসার হন, তখন নিন্দুকেরা চুপ হয়ে যান।আরতি ডোগরার সংক্ষিপ্ত পরিচয় -
পুরো নাম | আরতি ডোগরা/Arati Dogra | |||
জন্ম | July 1979 | |||
জন্মস্থান | দেরাদুন ( বর্তমানে - উত্তরাখন্ড) | |||
পিতা | কর্ণেল রাজেন্দ্র ডোগরা | |||
মাতা | কুমকুম ডোগরা | |||
IAS পাশ করেন | 2006 Rajasthan Cadre |
শিক্ষালাভ – আরতি ডোগরার পিতা রাজেন্দ্র ডোগরা একজন কর্ণেল, মাতা কুমকুম ডোগরা এক বেসরকারি স্কুলের Principal, স্বচ্ছল পিতামাতার একমাত্র সন্তান আরতি। কিন্তু শিশুবেলায় যখন ডাক্তারেরা বলেছিলেন স্বভাবিক বাচ্চাদের সাথে লেখাপড়া করতে পারবে না আরতি, তাঁর জন্য বিশেষ স্কুলের ব্যবস্থা করতে হবে, তখন বাবা মা হিসাবে নিশ্চয়ই তাঁরা আশাহত হয়েছিলেন, কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি। তাঁরা ঠিক করেছিলে আরতি সাধারণ বাচ্চাদের সাথেই সাধারণ স্কুলেই পড়বে।
আরতি দেরাদুনের Welham Girls School থেকে স্কুলের পাঠ শেষ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন Lady Shreeram college থেকে Economics এ স্নাতক হন। এরপরে দেরাদুনে ফিরে গিয়ে তিনি Master ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন আরতি ডোগরা।
UPSC তে সাফল্যলাভ - 2006 সালে আরতি ডোগরা UPSC পরীক্ষাতে সফল হন। আরতি প্রথম বারের চেষ্টায় এই সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তবে এক্ষেত্রে আরতি অন্য এক মহিলা IAS অফিসার দ্বারা অনুপ্রানিত হয়েছিলেন। তিনি হলেন দেরাদুনের প্রথম IAS অফিসার Manisha Panwar , যিনি আরতিকে এই সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসার জন্য অনেক সাহায্য করেছিলেন বা Guide করেছিলেন। তারফলে প্রথম বারের চেষ্টায় 2006 সালে এই সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সফল হন - Rajasthan Cadre বিভাগে।
কর্মজীবন - IAS হিসাবে আরতি ডোগরার বেশ কর্মবহুল ও জনপ্রিয়। তিনি নির্বাচন দপ্তর এবং জেলা শাসকের দায়িত্ব বেশ সুনামের সাথে সামলেছেন। জেলা শাসক হিসাবে আজমেড়, যোধপুর, বিকানির, বুন্দি ইত্যাদি জেলায় কাজ করেছেন। তিনি তাঁর সহকর্মী এবং সাধারণ মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় ও তার সাথে সাথে কাজের ক্ষেত্রে তিনি খুবই কঠোর। আরতি ডোগরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর খুবই প্রিয়পাত্রী।
👉 আরতি ডোগরা বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রশাসনিক কর্মসূচীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। নির্বাচন দপ্তরে ভালো কাজ করার জন্য তিনি জাতীয় পুরষ্কারও পেয়েছেন। তাঁর আমলে অজমেঢ় জেলায় বিশেষ ভাবে সক্ষম ভোটারদের ভোটদানের জন্য বুথমুখী করার ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন দেখা যায়। এই কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে 2019 সালের জাতীয় ভোটার দিবসে তিনি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেন।
👉 আরতি ডোগরা বেশ কিছু উন্নয়নমূলক সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি যেসব সামাজিক কর্মসূচীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
(1)Banko Bikano – হল মরু জেলা বিকানির এ স্বচ্ছতা কর্মসূচী। এতে তিনি সাধারণ মানুষ এবং অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে যুক্ত করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, এবং এই প্রকল্পে জনসাধারনের জন্য বহু Toilets নির্মান করা হয়েছিল ও তাঁর সাথে সাথে জন সাধারনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা কর্মসূচী নেওয়া হয়েছিল।
(2) Maa – মা কর্মসূচিতে মেয়েদের ও বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের রক্তাল্পতা রোধের জন্য এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য এই প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা নেয়।
(3) আরতি ডোগরা যখন বিকানির জেলার DM হিসাবে কর্মরত ছিলেন তখন তিনি ডাক্তারদের অনাথ কন্যা সন্তান দত্তক গ্রহন করতে উৎসাহিত করেন। তাঁর এই ডাকে সাড়া দিয়ে বহু ডাক্তার এগিয়ে আসেন, এর ফলাফল স্বরূপ 40 জন ডাক্তার 40 টি কন্যা সন্তান দত্তক হিসাবে গ্রহন করেন, এবং এই দত্তক গ্রহন করার প্রবণতা এখনো রয়েছে। এটা আরতি ডোগরার সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট এক কাজ বলা যেতে পারে।
(4) যোধপুরে MD হিসাবে কর্মরত থাকার সময় তিনি স্বল্প খরচে গরীব মানুষদের নিকট আলো পৌঁছে দেবার এক সুন্দর কর্মসূচী নেন। ফল স্বরূপ 3,27,819 টা LED বাল্ব সারা যোধপুরে বিতরন করা হয়। শিশুদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে এই প্রকল্পটির অবদান উল্লেখযোগ্য।
👉 পরিশেষে বলা যায় আরতি ডোগরার IAS হবার পিছনে তাঁর মায়ের ভূমিকা খুবই উল্লেখযোগ্য। যখন পরিজনরা আরতির শারীরিক ত্রুটি নিয়ে উপহাস করত বা তাকে আর একটা সন্তান নেবার জন্য পরামর্শ দিত, তখন তাঁর মায়ের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠত। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর মেয়ের মধ্যেও যেন এই দৃঢ়তা আসে। এবং তা সত্যই এসেছিল তাঁর জ্বলন্ত প্রমান আপনাদের চোখের সামনে। শেষে আরতির একটা বার্তা দিয়ে এই আর্টিকেল শেষ করব, আরতি নিজেই প্রকাশ করেছিলেন – যে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ তাকে সহ্য করতে হয়েছিল – তা যেন আর কাউকে সহ্য করতে না হয়।
Note - মাননীয়া আরতি ডোগরা সম্পর্কে লেখা এই পোস্টের উদ্দেশ্য আমাদের মত সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তাঁর সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তাদেরকে একটু Motivate করা। আমরা অনেকে হতশার মধ্যে ডুবে থেকে জীবনে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ি। তাই তাদের উদ্দেশ্যে একটিই বার্তা হাল না ছেড়ে চেস্টা করে যাও, সমাজের ব্যঙ্গ বিদ্রুপে কান দিও না। একদিন তুমি নিশ্চয়ই জয়ী হবে - তখন সমাজ তোমাকে বাহবা দেবে।
আরো পড়ুন 👉 কাতারের বিস্ময় বালক ঘানিম আল মুফতাহ।
Please do not enter any spam link in the comment box