উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভ্রমন অমনিবাস
“If you have a garden and a library, you have everything you need.” _ Marcus Tullius Cicero
রোমান পণ্ডিত Marcus Tullius Cicero এর এই বিখ্যাত উক্তির মধ্যে দিয়ে বইপড়ার প্রয়োজনীয়তা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা অতুলনীয়। যদি আপনার একটি বাগান (খাদ্যের জন্য) ও একটি লাইব্রেরী (পড়ার জন্য) থাকে তবে আর কি প্রয়োজন আছে? আপনার শারীরিক ও মানসিক সব সুখের উৎস হতে পারে নিয়মিত বই পড়া। তাই আজই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, আপনার রুচি অনুযায়ী পছন্দের বই কিনুন আর গড়ে তুলুন আপনার নিজস্ব জগৎ। যদি আপনার ভ্রমনের শখ থাকে অথবা ভ্রমনের বই পড়ার নেশা থাকে আপনার এই পছন্দের তালিকায় সহজেই যোগ করতে পারেন মিত্র এন্ড ঘোষ পাবলিশার্স প্রকাশিত উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা উমাপ্রসাদ ভ্রমন অমনিবাস।
বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যিকদের মধ্যে উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম আজ সবার আগে স্থান পেয়েছে। তাঁর রচিত প্রতিটি গ্রন্থই পুরোপুরি নির্ভেজাল ভ্রমণ বিবরণে সমৃদ্ধ। অতি সুখপাঠ্য, প্রসাদগুনে ভরা, একটানা না পড়ে থামা যায় না অথচ সেখানে কাল্পনিক রোমান্স বা গল্প বলার চেস্টা নেই। শুধু রচনাশৈলী বা বিশেষ দৃস্টি ভঙ্গির জন্যই যে উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভ্রমণ কাহিনী এত জনপ্রিয় তা নয়। তাঁর জনপ্রিয়তার আরো একটি বড় কারন – তিনি তাঁর ভ্রমনের স্থানগুলি, সেখানকার প্রকৃতি ও মানুষকে একেবারে আপন করে পাঠকের সামনে এনে উপস্থিত করেন। পাঠক তাঁর সঙ্গে স্বচ্ছন্দে বিচরন করেন হিমালয়ের সুদুর্গম অঞ্চলে, নেফার অরন্যবেস্টিত পরশুরাম কুণ্ডে, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে, খাইবার পাশ –এ, দক্ষিণ ভারতের কাবেরী নদীর উৎসে, কখনও ভারতের বাইরে সিংহলের বৌদ্ধতীর্থে অথবা নিবিড় কোন ঝর্নার পাশে। তাঁর ভ্রমন সাহিত্যের অসংখ্য স্থানের প্রকৃতির বিবরণ এবং নানা ধরনের মানব সমাজের এই ঘনিস্ট পরিচয় বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে এক নতুন দিগন্তের উম্নোচন। পাঁচ খণ্ডে সম্পূর্ন উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভ্রমন কাহিনীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় আজ স্বাস্থ্যকথার পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হল।
উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যেমন ব্যাক্তি হিসাবে ছিলেন শান্ত, সরল ও সাধাসিধে তেমনই তাঁর লেখার ধরনও শান্ত, সরল ও সাধাসিধে। তাঁর লেখার মধ্যে একেবারে সমাজের নীচুতলার মানুষের গহীন কথা থেকে প্রকৃতির নিবিড় পরিচয়, বহু অজানা তথ্য অনায়াসে স্থান পেয়েছে, আর স্থান পেয়েছে দেশ বিদেশের নানা কথাও। পাতার পর পাতা এভাবে হয়ে উঠেছে অসম্ভব সুখপাঠ্য।
উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা পাঠকদের সুবিধা ও আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য উমাপ্রসাদ ভ্রমন অমনিবাস এর কোন খণ্ডে কি আছে তার সম্পূর্ন পরিচয় নীচে বিবরণ দেওয়া হল -
প্রথম খণ্ড – গঙ্গাবতরণ, হিমালয়ের পথে পথে, সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি, আফ্রিদি মুল্লুকে।
দ্বিতীয় খণ্ড – মনিমহেশ, ত্রিলোকনাথের পথে, কুয়ারী গিরিপথে, বৈষ্ণোদেবী, অরুণাচলে মোনপাদের দেশে, রেণুকা হ্রদের তীরে, পরশুরামকুন্ড।
তৃতীয় খণ্ড – শেরপাদের দেশে, আবার শেরপাদের দেশে, গোঁসায়কুণ্ড, গুপ্তেশ্বর, সাতশো পাহাড়ের দেশ- সারান্ডা, কাবেরী কাহিনী, লীলাজন, যেখানে বাঘের ভয়।
চতুর্থ খণ্ড – কৈলাশ ও মানস সরোবর, শ্রীপাদ, কেদারনাথ, মদমহেশ্বর, তুঙ্গনাথ, রুদ্রনাথ, কল্পেশ্বর।
পঞ্চম খণ্ড – পালামৌর জঙ্গলে, দুধওয়া, খাজুরাহোর পথে, জলযাত্রা, কচ্ছ, আরবসাগরের তীরে, বর্মা মুলুকে, তপোভূমি মায়াবতী, মুক্তিনাথ, আলছায়ার পথে, পশ্চাতের আমি।
লেখক পরিচিতি –
উমাপ্রসাদ মুখপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০২ সালে কলকাতার ভবানীপুরের বিখ্যাত মুখোপাধ্যায় পরিবারে। পিতা ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং মাতা ছিলেন যোগমায়া দেবী। তার লেখা আমার ছেলেবেলা থেকে তাঁর বালক জীবনের কথা জানা যায়। মেধাবী উমাপ্রসাদ ছোট থেকেই ছিলেন শান্ত, সরল ও খুব দরদী মনের মানুষ। তিনি খুব বই পড়তে ভালোবাসতেন। বাড়ির বিশাল লাইব্রেরীতে তাঁর অনেক সময় কেটে যেত। পড়াশোনার পাশাপাশি ভ্রমণ নিয়েও তার সবিশেষ উৎসাহ ছিল। তিনি ভারতের প্রথম পর্বতারোহণ সংস্থা 'হিমালয়ান অ্যাসোসিয়েশন' এর প্রতিষ্ঠাতা এবং 'হিমালয়ান ক্লাব'-এর আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি।
উমাপ্রসাদ মুখপাধ্যায় ছিলেন এক অক্লান্ত পরিব্রাজক। তিনি ১৯২৮ সালে নিজের মা’কে নিয়ে প্রথম হিমালয় দর্শনে যান। তারপর অকৃতদার এই সাধক পরিব্রাজক দীর্ঘদিন হিমালয়ের পথে পথে ঘুরেছেন। সামান্য কিছু পাথেয় করে ঘুরে বেড়িয়েছেন গহন জঙ্গলে,রুক্ষ মরুভূমিতে, নৌকার যাত্রী হয়ে ভ্রমণ করেছেন সমুদ্রে। পরিব্রাজক হিসাবে উমাপ্রসাদের নিজের দেখা নিজের বিষয়কে নিয়ে সহজ ভাষায় যে সমস্ত বই লিখেছেন সেগুলি বিশিষ্ট সাহিত্য হয়ে উঠেছে। হিমালয় ও ভারতের গিরিপথ ও গিরিশৃঙ্গ বিষয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যা বেশি। মণিমহেশ নামক ভ্রমণকাহিনীর জন্যে ১৯৭১ সালে তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। এই মহান পরিব্রাজক ১৯৯৭ সালে মারা যান।
উমাপ্রসাদ মুখপাধ্যায় ভ্রমন অমনিবাস এর সংকশিপ্ত পরিচয় এখানে দেওয়া হল। আপনারা ভালো লাগলে অবশ্যই সংগ্রহ করে বইটি পড়ে নিতে পারেন। পড়লে নিশ্চয়ই আপনারা এক অজানা জগতের অনাস্বাদিত অনুভূতি লাভ করবেন। অনেক নতুন কিছু জানার সাথে সাথে আপনারাও লেখকের শান্ত, সরল ও সাধাসিধে জীবন যাত্রার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেহ মনের সুস্থতা অর্জনে সক্ষম হবেন।
Note - একাধিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যারা নিয়মিত বই পড়েন তাদের গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়। বই পাঠ মানুষকে সুখি করে তোলে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর আপনার নিজস্ব লাইব্রেরির নিভৃতে পছন্দের বই পড়ার সুখে ডুবে যাওয়া – এক পরম বা স্বর্গীয় শান্তির ব্যাপার। এ এক এমন জিনিস যা আপনার মানসিক প্রশান্তিকে উচ্চ স্তরে পৌঁছে দেয়। আপনার শারীরও সেই সুখের আবেশে অনেক সুস্থ-সবল হয়ে ওঠে। এই যে দেহমনের ও দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার জন্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা একান্ত জরুরী। এই প্রয়াসকে স্বার্থক করে তোলার জন্য ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বই সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা হল।
আরও পড়ুন 👉 জীবনের ঝরাপাতা - সরলাদেবী চৌধুরানী।
Please do not enter any spam link in the comment box