তাশিরোজিমা - বেড়ালদের স্বর্গদ্বীপ।। Tashirojima Cat's Island
শুধুমাত্র বেড়ালদের দ্বীপ! অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? হ্যাঁ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। জাপানের ওশিকা উপদ্বীপে রয়েছে এমন প্রায় 11টি ছোট ছোট দ্বীপ যেগুলি বেড়ালদের স্বর্গরাজ্য। এগুলি হল আওজিমা, কাদারজিমা, জেনাকাইজিমা, মানবেজিমা, তাশিরোজিমা ইত্যাদি। এগুলিকে জাপানি ভাষায় বলা হয় 'নেকোজিমা' (Nekokjima) - যার অর্থ বেড়ালদের দ্বীপ। আজকে Notepage এর কলমে জাপানের অন্যতম Nekokjima তাশিরোজিমা নিয়ে আলোচনা করব।
Image by Dimitris Vetsikas from Pixabay
বিড়াল আগমনের ইতিহাস - দ্বীপটি বর্তমানে প্রায় জনশূন্য হলেও, 1950 এর দশকের এক হিসেবমতে দ্বীপের জনসংখ্যা ছিল 1000 জন। কিন্তু কি কারনে এখানে মানুষের সংখ্যা কমে গেল এবং বেড়ালের সংখ্যা বেড়ে গেল? তার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন -
প্রথমত - দ্বীপ গুলিতে বসবাসকারী লোকদের প্রধান জীবিকা হল মৎস শিকার। কিন্তু এখানকার জেলেদের প্রধান শত্রু ছিল ইঁদুর। ইঁদুরেরা জেলেদের মাছ ধরার জাল গুলি কেটে নষ্ট করে দিতো। তার ফলে তাদের বিস্তর ক্ষতি হত। এই সমস্যার সমাধানের জন্য এখানকার অধিবাসীরা মূল দ্বীপ থেকে বেশ কিছু বেড়াল নিয়ে যায়, এবং তার সুফলও পায়। তাছাড়া এখানকার অধিবাসীরা মনে করেন বিড়ালকে খাওয়ানো হলে তাদের ধন সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, স্থানীয়রা এধরনের এক বিশ্বাস থেকেই বিড়াল পালন করে থাকেন। ফলে, বর্তমানে এই দ্বীপে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বাড়তে শুরু করে। জাপানের এক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুসারে দ্বীপের বাসিন্দাদের কোন পোষা কুকুর নেই এবং দ্বীপে কুকুরের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
দ্বিতীয়ত – তাশিরোজিমা দ্বীপটি ভালো মানের রেশম কীট চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। জাপানের তোকুগাওয়া রাজাদের সময় (Tokugawa or Edo period) থেকে এই রেশম পালন ব্যাপক আকার ধারন করে। কিন্তু এই রেশম পালনে বাঁধা সাধে ইঁদুরের দল। তারা রেশম পালনের গাছের পাতা গুলি খেয়ে ফেলত এবং রেশমের সুতো গুলি কেটে দিয়ে রেশম চাষের অনেক ক্ষতি করত। এই সমস্যার সমাধানের জন্য তারা বেড়াল আমদানী করে এবং এরফলে তারা ইঁদুরের অত্যাচার থেকে রেহাই পায়। তাছাড়া জাপানের সংস্কৃতি অনুসারে এখানকার অধিবাসীরা মনে করেন বিড়ালের যত্ন সৌভাগ্য ও সম্পদ বয়ে আনে এমন প্রাচীন বিশ্বাস থেকেই নিজেদের পোষা বিড়ালের রাজকীয় ভরণপোষণ করেন দ্বীপটির বাসিন্দারা।
😸 কিন্তু প্রশ্ন হল এখানে মানুষের সংখ্যা কমে গেল কেনো? এর কারণ হল এই দ্বীপের বেশির ভাগ মানুষই ছিল মূল ভূখন্ড থেকে যাওয়া বাসিন্দা। বয়স জনিত কারনে তাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর কারনে জনসংখ্যা কমতে থাকে। নতুন করে খুব কম বাসিন্দাই সেখানে পাড়ি জমান। তাছাড়া 2011 সালের Tohoku সুনামিতে এই দ্বীপের উপকূল ভাগের বেশ ক্ষতি হয়, মৎস শিকার ব্যাহত হয়, ফলে অনেকে দ্বীপ ত্যাগ করেন। অন্যদিকে রাজকীয় যত্নে থাকা বেড়ালদের সংখ্যা বহাল তবিয়তে বাড়তে থাকে।
বিড়ালের মন্দির (Cat's Shrine) - বেড়ালের প্রতি ভালোবাসা এতই প্রগাঢ় যে তাশিরোজিমা দ্বীপে একটি বিড়াল দের জন্য
মন্দির (Shrine) গড়ে উঠেছে। অবশ্য এর পিছনে এক কাহিনী রয়েছে। প্রচলিত এক গল্প অনুসারে
তাশিরোজিমা দ্বীপের এক মৎস শিকারীর এক বেড়াল ছিল, যে বেড়ালটা তার আচারনের দ্বারা মৎস শিকার ও ওই
দিনের আবহাওয়া কেমন যাবে তার নির্দেশ করতে পারত। ফলে ওই মৎস শিকারীর খুব সুবিধা হত
এবং তাই সে তার বেড়ালটকে খুব ভালোবাসত। একদিন কোন কারনে বেড়ালটা মারা যায়। ফলে ওই
মৎস শিকারী খুব হতাশ হয়ে পরেন। বেড়ালটির প্রতি ভালোবাসার নির্দশন স্বরূপ তিনি একটি Shrine নির্মান করে দেন - যা খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে এই মন্দিরের নানা স্থানে
প্রচুর পরিমানে বেড়ালের নানা আকার ও নানা রঙের Toys রেখে দেওয়া হয়েছে। উদোমারি এবং নিতোদা গ্রামের মাঝে অবস্থিত এই মন্দিরটি দেখতে
অনেক পর্যটক এসে থাকেন।
বর্তমান পরিস্থিতি – বর্তমানে এইসব দ্বীপগুলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেড়ালদের কারনে সারা বিশ্বের দৃস্টি আকর্ষণ করেছে। সোস্যাল মাধ্যমগুলির মাধ্যমে সারা বিশ্বের পর্যটকরা এর কথা জানতে পেরেছেন – দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাপান সরকারও পর্যটনের উন্নতির জন্য নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতিদিন বেশ কিছু জলযান দ্বীপে পর্যটকেদের নিয়ে যাতায়াত করে। তাছাড়া প্রতি দু-এক মাস অন্তর পশু চিকিৎসকের দিয়ে বেড়াল গুলির তত্বাবধান করা হয়, ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
জানা-অজানা - বিরাট এই পৃথিবী এক রহস্যের আধার। মানুষের গোচরে অগোচরে নানান সব অবাক করা ঘটনা। জানা-অজানার কলমে আমরা আমাদের প্রিয় পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চাই এইসব ঘটনার ইতিবৃত্ত। কেননা,আমরা মনে করি নির্ভেজাল জ্ঞানচর্চা আর অজানাকে জানা এক নির্মল আনন্দের সন্ধান দেয়। পর্বাকারে পরিবেশিত হবে আমাদের এই জানা-অজানার কলম। আজকের পর্ব নং - ০২
Please do not enter any spam link in the comment box