অ্যারিসেবো বার্তা - The Arecibo Message

The Arecibo Message - মানব জাতির জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিলিপি ও অন্যের উদ্দেশ্যে প্রেরিত মানুষের প্রথম সাংকেতিক বার্তা। 
অ্যারিসেবো বার্তা - The Arecibo Message
অ্যারিসেবো বার্তা (The Arecibo Message) - 
বিশাল এই মহাবিশ্বের সীমা পরিসীমা সম্পর্কে অনুমান করা আমাদের মত সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে। যে সৌর জগতে আমাদের বসবাস তার অনুরূপ নক্ষত্রপুঞ্জ এমনকি পৃথিবীর সাদৃশ্য গ্রহও অনেক রয়েছে এই মহাকাশে। ফলে, সেইসব স্থানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা এমনকি কোন কোন বুদ্ধিমান জীবের অস্তিত্ব থাকা যে অসম্ভব নয় – তা বলাই বাহুল্য। তাই সাধারণ মানুষের কল্পনার হাত ধরে গল্প, উপন্যাস বা চলচিত্রে অনেকবারই এসেছে ভিনগ্রহীদের কথা। বিজ্ঞানীরাও এবিষয়ে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তেমনই এক প্রচেষ্টার কথা আজকে এর কলমে আলোচনা করা হল, তা হল - The Arecibo Message 

অ্যারিসেবো বার্তার (The Arecibo Message) উদ্দেশ্য ও গন্তব্যস্থল – 
আমাদের সৌরজগত থেকে 25000 আলোকবর্ষ (Light Year) দূরে অবস্থিত প্রায় 300,000 তারার সমস্টি M-13(The Great Hercule Cluster) নামের এক নক্ষত্রপুঞ্জ। এখানে কোন গ্রহের সাথে আমাদের পৃথিবীর মিল থাকা খুবই সম্ভব। মূলত M-13 এর উদ্দেশ্যেই 1974 সালের 16 নভেম্বর আমেরিকার নিয়ন্ত্রাণাধীন পুয়ের্তারিকার অ্যারিসেবো মানমন্দিরের Arecibo Radio Telescope এর সাহায্যে প্রায় 3 মিনিটের একটি সংকেত বার্তা প্রেরণ করা হয়। তবে এই বার্তা সরাসরি ভিনগ্রহীদের উদ্দেশ্যে না হলেও তৎকালীন সময় পর্যন্ত মানব জাতির উন্নয়ন, অবস্থান এবং অর্জিত জ্ঞানকে এই বার্তার মাধ্যমে ধরে রেখে বার্তাটি যাতে ওতটা পথ অতিক্রম করতে পারে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়। আর যদি সেখানে কোন বুদ্ধিমান জীব থেকে থাকে এবং তাঁরা যদি আমাদের পাঠানো এই Radioa Signal Decode করে বার্তাটা বুঝতে সক্ষম হয় বা বার্তার জবাব পাঠায় তা হবে অতিরিক্ত পাওনা। 

অ্যারিসেবো বার্তার(The Arecibo Message)গঠন – 
বিখ্যাত বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেক এবং কার্ল সেগান এই অ্যারিসেবো বার্তাটা গঠন করেন। তবে এই বার্তাটা মানুষের কোন ভাষা দিয়ে গঠিত নয়। কেননা, যদি কোন ভিনগ্রহী জীব থেকেও থাকে এবং তাঁরা যদি এই বার্তাটি পেয়ে থাকে তাঁরা মানুষের ভাষা কীভাবে বুঝবে? তাই বার্তাটি সাংকেতিক ভাষায় লেখা। বার্তাটি লিখনে বাইনারি কোড (0,1) ব্যবহার করা হয়েছে। মোট 1679টি বাইনারি কোড 73টি Row এবং 23টি Coloumn এ সাজিয়ে বার্তাটা গঠন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ এই Radio Signal বার্তাটির সময়সীমা প্রায় 3 মিনিট। 

কী আছে এই অ্যারিসেবো বার্তার (The Arecibo Message) মধ্যে – সম্পূর্ণ এই Radio Signal বার্তাটি 7টা অংশে বিভক্ত। নীচে আপনাদের কৌতূহল মেটানোর জন্য সহজ সরল ভাষায় বার্তাটা সম্পর্কে আলোচনা করা হল। 

অ্যারিসেবো বার্তা - The Arecibo Message
Image from - Wikipedia

প্রথম অংশ – একদম ওপরের অংশে বাইনারি কোডের মাধ্যমে 1 থেকে 10 পর্যন্ত সংখ্যাকে রাখা হয়েছে। এটির রং সাদা । মানব জাতির উন্নয়নে এই অঙ্কগুলির ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

দ্বিতীয় অংশ – হাইড্রোজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং ফসফরাস এই সব মৌলগুলির পারমাণবিক সংখ্যা বাইনারি কোডের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এই অংশের রং বেগুনি । জীবের মূলত DNA এর গঠনে এই সব মৌল গুলির গুরুত্ব এখানে তুলে ধরা হয়েছে। 

তৃতীয় অংশ – DNA এর মধ্যে উপস্থিত শর্করা এবং ক্ষারসমূহের রাসায়নিক সংকেত দেখানো হয়েছে, এই অংশের রং সবুজ। 

চতুর্থ অংশ – এই অংশে DNA এর Double Helix বা প্যাচানো গঠন দেখানো হয়েছে। এই অংশের রং নীল। নীল DNA এর Double Helix এর মাঝখানে সাদা রঙের একটি দন্ডাকার অংশে DNA তে উপস্থিত চারটি প্রধান অনু অ্যাডেনিন, থাইমিন, সাইটোসিন এবং গুয়ানিনের সম্পর্কে বাইনারি কোডের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। 

পঞ্চম অংশ – এই অংশে একজন মানুষের প্রতিলিপি দেখানো হয়েছে বাইনারি কোডের মাধ্যমে। এই অংশের রং লাল। মানুষটির একদিকে নীল কোডের মাধমে একজন মানুষের গড় উচ্চতা অন্যাদিকে সাদা কোডের মাধ্যমে সেই সময় (1974 সালের হিসাব অনুযায়ী) পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা (4,29,28,53,750 জন) দেখানো হয়েছে। 

ষষ্ঠ অংশ – এই অংশে দেখানো হয়েছে আমাদের সৌর জগৎ অর্থাৎ সূর্য এবং তার নয়টা গ্রহের অবস্থান (1974 সালে প্লুটো গ্রহের হিসাবের মধ্যেই ছিল)। এই অংশের রং হলুদ। এখানে পৃথিবীকে একটু উঁচু করে রাখা হয়েছে, যাতে অন্যরা যদি এই বার্তা ডিকোড করতে পারে তাহলে সহজে অনুমান করতে পারবে কোথা থেকে এই বার্তাটা প্রেরন করা হয়েছে। 

সপ্তম অংশ – সপ্তম বা শেষ অংশে Arecibo Radioa Telescope এর একটি প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়েছে বার্তা প্রেরনের উৎসস্থল হিসাবে। এই অংশের রং বেগুনি, নীল ও সাদা। 

বার্তার উত্তর কবে আসবে? এখানে মনে রাখা দরকার যে নক্ষত্রপুঞ্জ এর উদ্দেশ্যে এই বার্তাটা প্রেরণ করা হয়েছে পৃথিবী থেকে তার দুরত্ব 25000 আলোকবর্ষ (Light Year)। সুতরাং বার্তাটা সেখানে যেতে 25000 বছর এবং সেখানে যদি কোন বুদ্ধিমান জীব বার্তাটা ডিকোড করে উত্তর পাঠায় তবে তা আসতে 25000 বছর অর্থাৎ প্রায় 50000 বছর সময় লেগে যাবে। ওই সময়ে যে মানবগোস্টী পৃথিবীতে টিকে থাকবে তাঁরা হয়ত এটা প্রত্যক্ষ করতে পারবে (যদি বার্তার উত্তর আসে)। 

পরিশেষে বলা যায় যে, অ্যারিসেবো বার্তা(The Arecibo Message)মানব জাতির মহাকাশ গবেষণা, ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এক অনন্য পদক্ষেপ। সারা বিশ্বব্যপী এই বার্তা প্রদানের খবর দারুন জনপ্রিয় হয়। সেজন্য 2018 সালের 16 নভেম্বর Google এই বার্তাটার উদেশ্যে তার Search Engine এ Doodle করে বিশেষ সম্মান প্রদান করে। 2024 সালে The Arecibo Message 50 বছর পূরণ করবে।

জানা-অজানা - বিরাট এই পৃথিবী এক রহস্যের আধার। মানুষের গোচরে অগোচরে নানান সব অবাক করা ঘটনা। জানা-অজানার কলমে আমরা আমাদের প্রিয় পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চাই এইসব ঘটনার ইতিবৃত্ত। কেননা,আমরা মনে করি নির্ভেজাল জ্ঞানচর্চা আর অজানাকে জানা এক নির্মল আনন্দের সন্ধান দেয়। পর্বাকারে পরিবেশিত হবে আমাদের এই জানা-অজানার কলম। আজকের পর্ব নং - 03

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.