স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস - সুস্থ্যতার আসল রহস্য। Healthy Food Habits

স্বাস্থ্যই সম্পদ আর তাই দীর্ঘদিন নীরোগ সুস্থ্য-সবল থাকতে চাইলে মেনে চলুন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস ( Healthy Food Habits)
দীর্ঘদিন নীরোগ সুস্থ্য-সবল থাকতে কে না চাই? তবে তা পাওয়ার জন্য সবথেকে আগে দরকার সঠিক খাদ্যাভাস পালন করা। আর এই সঠিক খাদ্যাভাস হল বেশ কতকগুলি নিয়ম নীতির মেলবন্ধন। নিচে এসম্পর্কে আলোকপাত করা হল। চাইলে আপনিও এর সাথে যুক্ত করতে পারেন উপকার পাওয়া আপনার কোন নিয়ম। 

1. পরিমিত আহার করুন –

সুস্বাস্থ্যের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন পরিমিত আহার করা। কোন ব্যাক্তির কতটা আহার করা প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার দৈহিক Activity বা কর্মের ওপর। যারা অল্প পরিশ্রম করে তাদের তুলনায় যারা প্রচণ্ড পরিশ্রম করে বা খেলাধুলা করেন তাদের স্বাভাবিকভাবেই বেশি ক্যালোরিযুক্ত আহার করা প্রয়োজন। তাই আপনার Activity ওপর নির্ভর করে আহার করুন। কারন তার থেকে বেশি আহার করলে তা Fat রুপে দেহে সঞ্চিত হবে এবং কম করলে  Mal Nutrition দেখা দেবে।    


2. প্রতিদিন নির্দিস্ট সময়ে আহার করুন –

আমরা সবাই জানি আমাদের শরীরের যাবতীয় কর্মকান্ড একটি Biological Clock বা জৈবিক ঘড়ি অনুসারে চলে, অর্থাৎ একটি নির্দিস্ট সময়েই আমাদের ক্ষুধা লাগে এবং সেই সময় আপনার পাচনতন্ত্রও তার কাজ সঠিকভাবে করার জন্য তৈরি হয়। তাই আমরা যদি রোজ একটা নির্দিস্ট সময়ে আহার করতে পারি তাহলে খাদ্যের হজম ভালো হয় এবং খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলি ভালোভাবে শোষিত হয়ে দেহের কাজে লাগে। 


3. যতটা সম্ভব Un Processed খাবার খান –

প্রকৃতি থেকে সরাসরি প্রাপ্ত খাদ্য আমাদের শরীরের পক্ষে সবথেকে ভালো। কারন এই খাদ্য খুব সহজে পাচিত হয়ে সবথেক বেশি পরিমাণ পুষ্টিগুণ শরীরে শোষিত হয় এবং শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও কম করে। এই প্রকার খাদ্যগুলিকে Un Processed খাদ্য বলে, এর মধ্যে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান সহজ-সরলরূপে থাকে, ফলে সেগুলিকে আমাদের পাচনতন্ত্র সহজে ভেঙ্গে ফেলতে পারে।


এখন এইসব খাদ্য যত বেশি Processed করা হয় তত তার খাদ্যাপাদান জটিল হতে থাকে এবং পুষ্টিগুণও কমতে থাকেফলে সেইসব খাদ্যকে ভাঙ্গতে আমাদের পাচনতন্ত্রের বেশি পরিশ্রম করতে হয় এবং তা শরীরে বিরূপ প্রভাবও ফেলে। তবে এটাও ঠিক যে বেশ কিছু খাদ্যকে আবার ভক্ষ্যযোগ্য(Edible) করার জন্য কিছুটা প্রসেসড করতেই হয়। যেমন ধান থেকে আমাদের চাল বার করে ভাত, চিড়ে, মুড়ি বানাতে হয় বা গম ভাঙিয়ে আটা করা ইত্যাদি। আবার কোন কোন খাদ্যকে জীবাণুমুক্ত করতে বা সংরক্ষণ করতে এটা করতে হয়। এসময় কিছুটা পুষ্টিগুণ হারাতে হলেও এটা দরকার হয়। একে প্রাইমারি প্রসেসড বলা হয়।


কিন্তু যখন ওই খাদ্যগুলিকে আবার প্রসেসড করার জন্য পূনরায় তাপ দেওয়া, কৃত্রিম রং, ফ্লেভার, চিনি, লবন যুক্ত করে অন্যান্য খাদ্য বানানো, বা তাদের প্যাকেট/টিনজাত করা, বহুদিন ভালো রাখার জন্য নানা Preservative ব্যবহার করা হয় তাকে Secondary বা Tertiary Processed foods বলে – এই খাদ্য আমাদের খাদ্যাভাসে গ্রহন করা কি স্বাস্থ্যকর হতে পারে? কখনোই হতে পারে না। তাই এসব খাদ্য যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। 

 

4. Organic  খাদ্যের ওপর জোর দিন – 

কোনরকম রাসায়নিক সার-কীটনাশক, কৃত্রিম হরমোন ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাদ্য উৎপাদিত হয় তাকে  Organic Foods বা জৈবিক খাদ্য বলে। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জন্য দিনদিন এসব খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে বাজারে এসব খাদ্য পাওয়া একটু কঠিন হলেও একেবারে অসম্ভব না।সময় ও সুযোগ-সুবিধা থাকলে বা প্রয়োজনে আপনি নিজেই বাড়িতেই উৎপাদন করতে পারেন। মনে রাখবেন দীর্ঘদিন সুস্থ্য-সবল-নীরোগ থাকতে চাইলে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত খাদ্যের ওপর নির্ভর করতেই হবে।


5. যতটা সম্ভব খাদ্য চিবিয়ে খান –

খাদ্যকে সবথেকে সহজ উপায়ে হজম করা ও তার পুষ্টিগুণ দেহের কাজে লাগানোর সবথেকে ভালো অভ্যাস হল যতটা সম্ভব খাদ্য চিবিয়ে খাদ্য খাওয়া। এতে যেমন খাবারকে সম্পুর্ন আস্বাদন করা যায়, তেমনই অল্প খাবার প্রবণতা গড়ে উঠে। কারন বেশি করে চিবিয়ে খেলে আপনি কখনই অনেক খাদ্য খেতে পারবেন না – এটাই খুবই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। 


6. তৃপ্তি সহকারে খাদ্য খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন –

খাদ্যের রুপ-রস-গন্ধে খুশি হয়ে যদি আমরা খাবার খাই, তবে আমাদের মস্তিস্ক উদ্দিপ্ত হয়,  ও পাচনতন্ত্র সক্রিয় হয়। ফলে যে খাদ্য আমরা খাই তার পাচন ও শোষণ খুব ভালো ওঠে খাদ্য থেকে পরিপুর্ন পুষ্টি দেহ গ্রহন করতে পারে। আমাদের দেহ-মন ও উৎফুল্ল হয়ে ওঠে।


7. চিরাচরিত খাদ্যভাস অনুসরন করুন –

আঞ্চলিক প্রভেদ, সাংস্কৃতিক প্রভেদানুসারে একেক স্থানের অধিবাসীরা পুরুষানুক্রমে বিশেষ বিশেষ খাদ্যরীতিতে অভ্যস্ত থাকে। এবং সেই বিশেষ খাদ্যরীতিতে তাদের দেহ-মন-পাচনতন্ত্র স্বাচ্ছন্দ্যতা বোধ করে। তাই নীরোগ সুস্থ্য-সবল দেহ-মন-পাচনতন্ত্র এর অধিকারী হতে হলে আমাদের এই রীতি অনুসারে খাদ্য গ্রহন করার ওপর জোর দেওয়া উচিৎ।


8. আপনার দেহের নির্দেশ অনুসারে চলুন-

আমাদের দেহ খুবই Smart, যে খাদ্য সে গ্রহন করতে চায়, সেই খাদ্য আমরা খেলে দেহমনে তৃপ্তি আসে। আবার যে খাদ্য গ্রহনে শরীর বিরূপ হয়, তা গ্রহন করলে আমাদের পাচনতন্ত্রও তাতে অস্বাচ্ছন্দ্যতা বোধ করে। আর যেহেতু দেহ-মনের প্রকৃতি অনুসারে প্রতিটি মানুষ আলাদা, তাই আপনার দেহকে নীরোগ সুস্থ্য-সবল রাখতে শরীরের ভাষা বুঝতে শিখুন এবং সেই অনুযায়ী খাদ্য নির্বাচন করুন।  


9. খাদ্য তালিকায় নতুন খাদ্য গ্রহনে সাবধানী হন –

প্রয়োজনে বা আরো স্বাস্থ্যকর-খাদ্য খেতে আমরা নতুন কোন খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতেই পারি। তবে এক্ষেত্রে একটু সজাগ হন। কোন নতুন খাদ্য খাওয়া শুরু করতে চাইলে প্রথমেই আপনি আপনার ডায়েটিশিয়ান/পুষ্টিবিদ বা Health Expert সাথে পরামর্শ করে শুরু করুন। নিজে নিজে শুরু করতে চাইলে প্রথমে অল্প অল্প করে শুরু করুন এবং খেয়াল রাখুন আপনার শরীরে কোন ভালোমন্দ কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, সেই বুঝে চলুন।    


10. Food Craving এর প্রতি সতর্ক হন –

বিশেষ কোন খাদ্য প্রচুর পরিমানে খেতে চাওয়া বা খাওয়াই হল Food Craving – এটা কোন সুস্থ্য ক্ষুধার লক্ষণ নয়। এটা হয় কোন শারীরিক অসুস্থতা নির্দেশ করে, নতুবা দেহে কোন Micro Nutrients এর ঘাটতি নির্দেশ করে। এমন হলে সতর্ক হন এবং আপনার চিকিৎসক বা Health Expert এর সাথে পরামর্শ করে তাঁর নির্দেশ অনুসারে চলুন।   

হোমিওপ্যাথি মতানুসারে আমাদের শরীরের যেমন নিজ থেকে সুস্থ্য থাকা বা হওয়ার শক্তি থাকে, তেমনই রোগ শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে অনেক সময় বিপরীতভাবে নিজেকে ধ্বংস করার প্রবনতাও তাঁর হয়। ফলে যে খাদ্য/বস্তু/অভ্যাস/আচারন এ শরীরের ক্ষতি হয় তাই পেতে চাই – এই অবস্থা Tubercular Maism এ সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি হোমিওপ্যাথি মতানুসারে চিকিৎসিত হন তাহলে আপনার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক এর সাথে পরামর্শ করে তাঁর নির্দেশ অনুসারে চলুন। 

 

11. Junk Foods, Fast Foods বা ভাজা পোড়া খাদ্য এড়িয়ে চলুন –

Junk Foods, Fast Foods বা ভাজা পোড়া এই ধরনের খাদ্যগুলি কখনোই আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়, এগুলি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এগুলি খুব মুখোরোচক হলেও এসব খাদ্যের পুষ্টিগুন কিছুই থাকেনা এবং আমাদের পাচনতন্ত্রকে এইসব খাদ্য হজম করার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়। তাই সাময়িক তৃপ্তিকে বিসর্জন দিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এসব খাদ্যগুলি আপনার খাদ্য-তালিকা থেকে বিদায় করুন।


12. খাবার সময় বা খেয়ে উঠেই অতিরিক্ত জল পান করবেন না –

সবথেকে ভালো সময় হল খাদ্য খাবার আধঘণ্টা আগে বা আধঘণ্টা পড়ে জল পান করা। এতে আমাদের খাদ্য হজম ভালো হয়। কিন্তু খাদ্য খাবার সাথে সাথে বা খেয়ে উঠেই জল পান করলে খাদ্যকে পাচিত করার জন্য আমাদের পাচনতন্ত্রে যেসন এনজাইম বার হয় তা ভালোভাবে খাবারের সাথে মিশতে পারে না। তাই খাবার সময় বা খেয়ে উঠেই অতিরিক্ত জল পান করবেন না।

 

Note – ওপরের আলোচ্য অংশটি শুধুমাত্র Informational/Educational উদ্দেশ্যে প্রকাশিত, এটি কোন Medical Advice ও নয়। তাই কোন নতুন খাদ্য বা খাদ্যভাস শুরু বা বর্জন করা সর্বদা আপনার নিজের ডায়েটিশিয়ান/পুষ্টিবিদ বা  চিকিৎসক বা Health Expert এর সাথে পরামর্শ করে তবেই করুন।  

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.