কাকেবো পদ্ধতি কি (What is Kakeibo?) - জাপানি ভাষায় 'Kakeibo' শব্দের বিস্তারিত অর্থ হল -
👉 Kah - Household বা সাংসারিক,
👉 Keih - Financial বা আর্থিক,
👉 Boh - Record Book বা হাতবই।
অর্থাৎ একসাথে করলে এর অর্থ হয় সাংসারিক আর্থিক খরচের হাতবই। এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হল আপনার আয়, ব্যয় এবং সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রেখে একটি সাংসারিক 'বাজেট' তৈরি করা।
কীভাবে Kakeibo পদ্ধতিতে আপনার সাংসারিক বাজেট তৈরি করবেন?
Step - 01 👉 Kakeibo পদ্ধতিতে আপনার সাংসারিক বাজেট তৈরি করতে হলে প্রথমেই আপনি নিজেকে চারটি মূল প্রশ্ন করবেন। এই চারটি প্রশ্ন হল -
(01) How much money do you have? - অর্থাৎ কত টাকা আপনি আয় করেন?
(02) How much money would you like to save? - অর্থাৎ কত টাকা আপনি সঞ্চয় করতে চান?
(03) How much money are you spending? - অর্থাৎ কত টাকা আপনি খরচ করছেন?
(04) How can you improve? - কীভাবে আপনি এর উন্নতি করবেন বা আপনার সাংসারিক খরচ কমিয়ে সঞ্চয় করতে সক্ষম হবেন।
Step - 02 👉 এরপর আপনি আপনার মোট ব্যয়কে চার ভাগে ভাগ করবেন। এই চারটি ভাগ হল -
Needs - দরকারি জিনিসের খরচ - যা আপনাকে করতেই হবে। যেমন - খাদ্য, ওষুধ ইত্যাদি।
Wants - আপনার কাঙ্খিত জিনিস বা বিলাস দ্রব্য - যা এই মুহূর্তে খরচ না করলেও চলে। যেমন - দামি শার্ট বা মোবাইল কেনার ইচ্ছা ইত্যাদি।
Culture - সামাজিক কারনে হয় এমন সব খরচ। যেমন বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে গিয়ে খাবার খাওয়া বা সামাজিক কোন উৎসব ইত্যাদিতে যোগদান।
Unexpected - এমন কিছু খরচ যা আপনি আগাম বুঝতে পারেন না। যেমন হঠাৎ করে শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখানো, জলের কল খারাপ হলে তা সারানোর খরচ ইত্যাদি।
Step - 03 👉 এর পরের ধাপটিই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই ধাপে আপনাকে এক মাসের জমা-খরচের প্ল্যান করতে হবে। আপনার আয় কতটা এবং কতটা সঞ্চয় করতে চান তার একটা লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে আপনার সাংসারিক খরচগুলি ওপরের দেওয়া চারটি খাতে লিখে নিতে হবে। এরজন্য আপনাকে খরচের গুরুত্ব অনুযায়ী চার রঙের কলম ব্যবহার করতে হবে। মাসিক প্ল্যান হয়ে গেলে এবার খরচের গুরুত্ব অনুযায়ী কোন খাত থেকে খরচ কমিয়ে ফেলে সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার মনের দৃঢ়তাই শেষ কথা - যা আপনাকে আপনার স্থির করা মাসিক প্ল্যান পূরণে সাহায্য করবে। এবং পরের মাসে আরো উন্নতি করার চেষ্টা করতে হবে।
কাকেবো পদ্ধতি মেনে চলতে পারলে আপনি আপনার সংসারের ব্যয় 35% পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হবেন - তবে তার জন্য আপনাকে ধৈর্য সহকারে এবং যুক্তি সংগতভাবে ব্যয় কমাতে হবে - দেখতে হবে যাতে আপনার মৌলিক চাহিদা না বাদ পরে। কারণ ব্যয় কমানো মানে এই নয় যে, না ভেবে চিন্তে সবকিছু কমাতে শুরু করবেন। বর্তমানে এই পদ্ধতি পালনের জন্য অনেকে বিভিন্ন Application ( Android বা OS) বা Excel Sheet ব্যবহার করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে হাতে লেখার মাধ্যমে এই পদ্ধতি মেনে চলা অধিক উত্তম - কেননা প্রতিটি খরচ নিজ হাতে লিখে রাখা আপনার ওপর এক মানসিক প্রভাব ফেলে, যা আপনাকে মিতব্যয়ী হতে সাহায্য করে।
কাকেবো পদ্ধতির ইতিহাস - কাকেবো পদ্ধতি জাপানে চালু হয় 1904 সালে। 2018 সালে Fumiko Chaiba যখন Kakeibo - The Japanese Art of Budgeting and Saving Money নামে একটি বই লেখেন তখন বাইরের জগতে বিশেষ করে পশ্চিম দুনিয়ায় এটি জানতে পারে এবং ব্যপক জনপ্রিয় হয়। ফুমিকো চাইবা লিখেছেন যে, এই পদ্ধতি প্রচলন করেন জাপানি এক মহিলা সাংবাদিক Motoko Hani, তিনি জটিল ব্যবসায়িক বাজেটের সরল রূপ দিয়ে এই পদ্ধতি চালু করেন। কারণ ওই সময় জাপানের মহিলাদের বাইরে কাজ করার কোন সুযোগ ছিলনা। তাই তাঁরা অল্প আয়ে সংসার চালিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম হন। সেই অর্থে কাকেবো পদ্ধতি জাপানের মহিলাদের ব্যপক সাহায্য করেছিল।
কাকেবো পদ্ধতির উপকারিতা -
(01) কাকেবো পদ্ধতি আপনার সাংসারিক আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।
(02) কাকেবো পদ্ধতি মেনে চলার ফলে আপনার মধ্যে সঞ্চয় করার প্রবণতা দেখা দেয়।
(03) কাকেবো পদ্ধতি মেনে চললে আপনি অযাচিত বিপদ সমূহ মোকাবিলা করার জন্য আর্থিক ভাবে সক্ষম হবেন।
(04) কাকেবো পদ্ধতি আপনাকে মিতব্যয়ী হতে শেখায়।
(05) কাকেবো পদ্ধতি মেনে চলার ফলে আপনি স্বল্পে সন্তুস্ট হতে শেখেন - যা আপনাকে সুখী করে তোলে।
আরও পড়ুন 👉 মন ভালো রাখার 10 টি উপায়।
Please do not enter any spam link in the comment box