মানব দেহের অন্যতম অমূল্য সম্পদ হল চোখ। চোখ
ছাড়া যেমন এই পৃথিবীর কোন সৌন্দর্য আমরা উপভোগ করতে অক্ষম, তেমনি আমাদের দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে চোখ। এক
কথায় চোখ আমাদের দেহের খুব সুন্দর একটি অঙ্গ। তাই এই মহা মূল্যবান এবং অতি সুন্দর এই অঙ্গের যত্নে আমরা
সাধারন কি কি ব্যবস্থা নেব আসুন আজকের আলোচনায় জেনে নিই।
1, দিনে তিনবার অন্তত
পরিস্কার ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিন –
রাতে শোবার আগে, সকালে
ঘুম থেকে উঠে এবং সারাদিনের কাজের ফাঁকে যে কোন এক সময় পরিস্কার ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা
বেশ করে আপনার চোখে দিন।
বিশেষ করে বাইরে থেকে ফিরে এসে অবশ্যই জলের ঝাপটা দিন, এতে আপনার চোখ পরিস্কার হয়ে যাবে, সাথে সাথে চোখের ক্লান্তি বা Strain দূর হয়ে চোখের Nerve ও পেশিগুলি Relaxed হয়ে যাবে। যা আপনার চোখের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই
উপকারী। তাই রোজ তিনবার অন্তত পরিস্কার ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিতে কোন মতেই ভুলবেন না
– কারন এর কোন Side Effect নেই।
2, মোবাইল এ Blue Light Filter ব্যবহার করুন –
বর্তমান সময়ে মানুষ মোবাইলের ব্যবহারে
সকলে যে পরিমানে আসক্ত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে মোবাইল
যথেচ্ছ পরিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে, পার্কে, বাসে, ট্রেনে, শুয়ে, বসে – সব
জায়গায়, সব সময়ে মোবাইল হয়ে উঠেছে মানুষের একমাত্র সাথী। যার ফলে আমাদের দেহের লাজুক
অঙ্গ চোখেরও এর মাসুল গুনতে হচ্ছে। তাই ভয়াবহ এই সর্বনাশ থেকে আপনার চোখকে বাঁচাতে
–
- মোবাইল ব্যবহারে সাবধানী হন।
- মোবাইল ব্যবহার রুটিন অনুযায়ী করুন।
- মোবাইল ব্যবহারের সময়-সীমা যতটা পারা যায় কম করুন।
- রাতে বেলা শোবার আগে মোবাইল ব্যবহার করবেন না।
- অতি কাছ থেকে মোবাইল ব্যবহার করবেন না।
- মোবাইল এর ক্ষতিকর আলোর থেকে আপনার মূল্যবান চোখকে বাঁচাতে মোবাইল এ Blue Light Filter ব্যবহার করুন।
3, অধিক পরিমানে Computer এ কাজ করা সময় খেয়াল রাখুন –
আজকের এই কর্মব্যস্ততার দিনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই কর্মসূত্রে দীর্ঘসময় কম্পিউটারে কাজ করতে হয়। বড়দের সাথে ছোটদেরও Computer এ ক্লাস ইত্যাদি করতে হয়। এছাড়া বাচ্চারাও এখন কম্পিউটারের প্রতি অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়ছে। তাই Computer এড়ানো একান্ত সম্ভব নয়। সুতারং আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে-
💚Computer এর পর্দা এবং আপনার চোখের মধ্যেকার দূরত্ব কমপক্ষে দেড় থেকে দুই হাত রাখুন।
💚Computer এ অ্যান্টিরিফ্লেকশন কোটেড গ্লাস ব্যবহার করুন, এতে আপনার চোখের উপর প্রেশার কম পড়বে।
💚কখনও চেয়ারে দেহ এলিয়ে দিয়ে অথবা বেঁকে বসে কাজ করবেন না। এতে চোখের ক্ষতি হয়।
💚যদি আপনাকে টানা কয়েকঘণ্টা কম্পিউটারে কাজ করতে হয়, তাহলে মাঝেমধ্যে ৫ থেকে ১০ মিনিট কাজ বন্ধ রেখে চোখকে বিশ্রাম দিন।
💚মাঝে মাঝে চোখের পাতাগুলো বেশ কয়েকবার উঠা-নামা করুন। কখনও চোখ বন্ধ রেখে আইবলস্ বা নেত্রগোলক দুটি চক্রাকারে ঘোরান।
💚Computer এ কাজ করার সময় আমাদের চোখের পাতা ফেলার মাত্রা অনেক কমে যায়। এর ফলে চোখের জল শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই পর্যাপ্ত জল পানের দিকে খেয়াল রাখুন।
4, ভিটামিন - A যুক্ত খাবারের ওপর জোর দেবেন –
ভিটামিন - A কে বলা হয় চোখের ভিটামিন। এই ভিটামিন আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকারী। এর অভাবে রাতকানা এবং অন্ধত্ব রোগ হতে পারে। তাই চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য নিয়মিত ভিটামিন - A যুক্ত খাবার খাবেন।
ভিটামিন - A যুক্ত খাবার হল – গাজর, পালং শাক, ব্রোকলি, সরিষার শাক, লেটুস, মিস্টি কুমড়ো, মিস্টি আলু, টমেটো, আম, আঙুরের রস, দুধ, মেটে, সতেজ মাছ এরকম অনেক কিছু।
রোজকার খাবারের তালিকায়
এসব খাবার যদি আমরা খেতে পারি তাহলে সহজেই আমাদের দেহের দৈনিক ভিটামিন A চাহিদা
পূরণ হয়। তবে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এই ভিটামিনের চাহিদা অবশ্যই প্রাকিতৃক
ভাবে অর্থাৎ খাবার খেয়ে পূরণ করতে হবে। কোন ভাবেই ভিটামিন ক্যাপসুলস ইত্যাদি খেয়ে
পূরন করা যাবে না, আর যদি তা খেতেই হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
5, সম্পূর্ণ ও পরিপূরক খাদ্য তালিকার (Balanced Diet) ওপর নজর রাখুন –
শুধু ভিটামিন A যুক্ত খাবার খেলেই হবে না, আপনার চোখ তথা দেহের সর্বাঙ্গের যথাযথ যত্ন নিতে ও তাদের কার্যকলাপ সুস্থ রাখতে আমাদের প্রতিদিন গ্রহন করা প্রয়োজন সম্পূর্ণ ও পরিপূরক খাদ্যসমূহ (Balanced Diet)। আমাদের চোখ অত্যান্ত সূক্ষ সূক্ষ নার্ভ ও শিরা
সমূহ দিয়ে গঠিত। এই সমস্ত অতি সূক্ষ সূক্ষ নার্ভ ও শিরা সমূহের কার্যকলাপ সুস্থ
স্বাভাবিক রাখতে আমাদের সমস্ত রকম ভিটামিন, খনিজ লবণ সহ নানা মাক্রো ও মাইক্রো
নিউট্রিয়েন্টস (Macro
and Micro Nutrients) এবং উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদির দরকার হয়। তাই অবশ্যই সম্পূর্ণ ও পরিপূরক খাদ্য তালিকার (Balanced Diet) ওপর নজর রাখুন।
6, পড়াশোনা করার সময় বিশেষ খেয়াল রাখুন - আপনার যদি নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস থাকে বা আপনি কোন ছাত্র, গবেষক হন বা অন্য কোন কারনের জন্য আপনাকে যদি নিয়মিত অনেক Study করতে হয়, তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেখানে আপনি পড়াশোনা করেন সেখানে যেন পর্যাপ্ত আলো থাকে। রাতের বেলা পড়াশোনা করলেও পর্যাপ্ত আলোয় পড়াশোনা করবেন। কম আলোয় পড়াশোনা করলে আপনার চোখের ওপর চাপ পড়বে – যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
💚 মনে রাখবেন - বই আর চোখের মধ্যে দূরত্ব অন্তত ২৫ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত।
💚 অল্প আলোয় কখনও পড়বেন না, এতে আপনার চোখের উপর চাপ পড়ে।
💚 চলন্ত বাস অথবা ট্রেনে কিছু না পড়াই ভালো।
💚শোয়া বা আধশোয়া অবস্থায় পড়া উচিত নয়, এতে আপনার চোখের ক্ষতি হতে পারে।
💚 বিশেষ কারনে যদি টানা কয়েকঘণ্টা পড়ার দরকার হয়, তাহলে মাঝেমধ্যে চোখকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত।
7, সময় পেলেই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখুন – বর্তমান
সময়ে আমাদের দীর্ঘক্ষণ মোবাইল,টিভি বা কম্পিউটার এর পর্দায় চোখ রাখতে
হয়। এতে চোখের ওপর চাপ পড়ে প্রচন্ড, চোখ ক্লান্ত হয়। তাই, সুযোগ পেলেই আপনি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে থাকুন, বিশেষ করে সবুজ গাছপালার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকুন। কারন সবুজ রং
চোখে আরাম প্রদান করে, চোখের ক্লান্তি দূর করে, চোখের নার্ভ সমূহকে সতেজ করে তোলে।
8, মাথার যন্ত্রনার ওপর
খেয়াল রাখুন – মাথার যন্ত্রনার সাথে
চোখের গভীর সম্পর্ক রয়েছে একথা আমরা কিন্তু সবাই জানি। যদি আপনার নিয়মিত মাথার
যন্ত্রনা হতে থাকে এবং তার কারন যদি সাধারন সর্দি জ্বর বা পেটের গ্যাস ইত্যাদি না
হয় তবে আপনার প্রেসার চেক করানো দরকার এবং সেইমত ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি ব্লাড
প্রেসারের কোন সমস্যা না থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই একবার চোখের ডাক্তারের সাথে
পরামর্শ করা উচিৎ- আপনার চোখে কোন সমস্যা আছে কিনা বা আপনার এই মাথার যন্ত্রনার
আপনার চোখের কোন রকম সম্পর্ক আছে কিনা। অনেক সময় চোখের Power এর হেরফের ঘটলে,
বা পড়াশোনা বা অন্য কোন কাজে চোখের ওপর চাপ পড়লে মাথার যন্ত্রনা হতে পারে।
9, বছরে অন্তত একবার
হলেও চোখের ডাক্তারের সাথে দেখা করুন – কথায়
আছে দাঁতের যত্ন নিতে ছয় মাসে অন্তত একবার দাঁতের ডাক্তারের সাথে দেখা করা অত্যন্ত
জরুরি। একইভাবে আপনার বয়স যদি ত্রিশ এর বেশি হয়, চোখে কোন সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারেন বা ঘন ঘন দাঁত ও মাথার যন্ত্রনায় ভোগেন-
তাহলে দেরি না করে অবশ্যই চোখের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। এরপর
চোখের যদি কোন সমস্যা নাও থাকে তাহলেও বছরে অন্তত একবার
হলেও চোখের চেক-আপ করান। মনে রাখবেন নিয়মিত চোখ চেক-আপ করিয়ে নিলে চোখের
রিফ্র্যাকটিভ এরর, অ্যাসোসিয়েটেড অকিউলার সারফেস ডিজিজ,
লিড মার্জিন ডিজিজ অথবা ড্রাই আই-এর
মতো সমস্যাগুলি এড়ানো সম্ভব।
10, চোখের ক্লান্তি দূর করতে ও সাধারন যত্ন নিতে যা যা করবেন এক নজরে –
💚দিনে অন্তত ৩ বার চোখে জলের ঝাপটা দিন।
💚একটানা টিভি, Mobile বা Computer এর দিকে তাকিয়ে থাকবেন না।
💚টিভি, Mobile বা Computer এ অ্যান্টিরিফ্লেকশন কোটেড গ্লাস এবং Blue Light Filter ব্যবহার করুন।
💚ভিটামিন A যুক্ত এবং Balanced Diet এর ওপর জোর দিন।
💚রাস্তায় চলার সময় ধুলোবালি এবং আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে আপনার চোখকে বাঁচাতে সবসময় অ্যান্টিগ্লেয়ার চশমা ব্যবহার করুন।
💚সূর্যের অতি-বেগুনি রশ্মি সরাসরি চোখের ক্ষতি করে, এথেকে বাঁচতে কালো চশমা বা সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
💚কমদামী সানগ্লাস ও চশমা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
💚চোখের ক্লান্তি দূর করতে শসা বা আলু কেটে নিয়ে চোখের ওপর ৫ থেকে ১০ মিনিট রেখে দিন। এতে চোখের ক্লান্তির পাশাপাশি চোখের আশপাশের কালোভাবও দূর হয়ে যাবে।
💚বছরে অন্তত একবার হলেও চোখের ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
Please do not enter any spam link in the comment box