কবিতা পাঠের উপকারিতা
- হতাশা দূর করে
- একাকিত্ব দূর করে
- সৃজন শক্তি বৃদ্ধি পায়
- দেহমনে অপূর্ব সব অনুভূতি পাওয়া যায়
- মনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়
- স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়
মনের বিচারে এক একটি মানুষ এক এক রকম হয়। তাই একেক মানুষের একেক রকমের চাহিদা হয়। সব জিনিসের মত এটা কবিতার ক্ষেত্রেও সত্য। সেজন্য এক জনের খুব ভালোলাগার অন্য জনের ভালো লাগতে নাও পারে। আসলে মানুষ তার সুখদুঃখ, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির আঙ্গিকে কবিতাকে ভালবাসে। নীচে বেশ কিছু ভালো লাগার কবিতা আপনাদের সাথে শেয়ার করা হল। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন –
কবিতা- নীল মসজিদের ইমাম
কবি- আল মাহমুদ
ঝড়ো বাতাসের
ঝাপটা থেকে তোমার উড়ন্ত চুলের গোছাকে
ফিরিয়ে আনো মুঠোর মধ্যে। বেণীতে বাঁধো
অবাধ্য অলোকদাম।
কেন জিনেরা তোমার কেশ নিয়ে খেলা করবে?
আজ সমুদ্রের দিকে তাকাও। দ্যাখো জোয়ারে ফুলে উঠেছে
দরিয়া। চাঁদের গুঁড়িয়ে যাওয়া প্রতিবিম্বকে নিয়ে
টাকার মত লোফালুফি করছে উন্মত্ত তরঙ্গের মাতাল হাত।
তোমার আব্রু ঠিক করে নাও। এইতো ছতর ঢাকার সময়।
কোথায় হারিয়ে এসেছো তোমার বুকের
সেফটিপিন?
আজ ইবলিসকে তোমার ইজ্জত শুঁকতে দিও না।
কবিতা - কাজলাদিদি
কবি- যতীন্দ্রমোহন বাগচী
বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক্-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে,
থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন
দিদি বলে ডাকি তখন,
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি, তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল্ মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে
আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন ক'রে রবে?
আমিও নাই---দিদিও নাই---কেমন মজা হবে!
ভূঁই-চাঁপাতে ভরে গেছে শিউলী গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল |
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে
বুলবুলিটা লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা ছিঁড়তে গিয়ে ফল,
দিদি যখন শুনবে এসে বলবি কি মা বল্ |
বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর তলে পুকুর পাড়ে
ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতো জেগে রই,---
রাত্রি হোল মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
কবিতা- যখন আমি মারা যাই
কবি- রুমি
যখন আমাকে কফিনে আটকে নাও,
কখনোই মনে করো না তুমি—
এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছি আমি
চোখের জল ফেলো না কোন
কোরো না আর্তনাদ কিংবা অনুভব দুঃখ—
আমি পতিত হচ্ছি না কোন দানবের নরকে
যখন আমার লাশ বহিত হয়
আমার চলে যাওয়ায় অশ্র“ ফেলো না
আমি ছেড়ে যাচ্ছি না,
আমি পৌঁছে যাচ্ছি— শাশ্বত ভালোবাসায়
আমাকে যখন কবরে ছেড়ে যাও
বিদায় বোলো না তুমি
কবর তো কেবল একটি পর্দা, যার পেছনে অনন্ত স্বর্গোদ্যান
আমাকে তো দেখবে শুধু কবরে নামাতে
এখন দ্যাখো উঠে আসতে
কিভাবে শেষ হতে পারে ওখানে
যখন সূর্য অস্তমিত হয় অথবা চাঁদ ডুবে যায়
এটা দেখে মনে হয় শেষ
যা অনেকটা সূর্যাস্তের মতো
কিন্তু বাস্তবে, এটা কেবলই নিুগামী হওয়া
তোমাকে যখন কবরে আটকে দেয়া হয়
এটা সেই মুহুর্ত, যখন তোমার আত্মার চির স্বাধীন
তুমি কি দেখেছো কখনো—
পৃথিবীতে বপিত হয়েছে একটা বীজ
যেটা জেগে ওঠেনি নতুন এক জীবন নিয়ে,
ক্যানো তুমি একটা মানুষ নামের বীজের উঠে আসাতে সন্দেহ করবে!
তুমি কি দেখেছো কখনো
ক’পে নোয়ানো কোন বালতি
ফিেের এসেছে খালি,
ক্যানো একটা আত্মার জন্য বিলাপ করো
যদি তা ফিরে আসতে পারে আবার
যেভাবে ইউসুফ ফিরে এসেছে ক’প থেকে!
যখন শেষবারের মতো তুমি
তোমার মুখ বন্ধ করো,
তোমার শব্দ এবং আত্মা
এমন এক জগতে যুক্ত হবে—
যেখানে নেই কোন সময়, যার নেই কোন ঠিকানা
(ফাতিন আরেফিন এর অনুবাদ থেকে)
কবিতা:- আবার আসিব ফিরে
কবি:- জীবনানন্দ দাশ
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হবো – কিশোরীর – ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলঙ্গীর ঢেউ এ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।
হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।
হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে।
হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙ্গা বায় – রাঙ্গা মেঘে সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে,
দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।
কবিতা- রূপাই
কবি- – জসীম উদ্দীন
এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া |
জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান সরু,
গা-খানি তার শাওন মাসের যেমন তমাল তরু |
বাদল-ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলী মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল |
কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোনো চাষি,
মুখে তাহার জড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি।
কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দাঁতের কালি দিয়েই কেতাব কোরান লেখি
জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভূবনময়;
চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়।
সোনায় যে-জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার’
রং পেলে ভাই গড়তে পারি রামধনুকের হার |
কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,
তারির পদ-রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন |
সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ,
কালো-বরণ চাষির ছেলে জুড়ায় যেন বুক |
যে কালো তার মাঠেরি ধান, যে কালো তার গাঁও!
সেই কালোতে সিনান করি উজল তাহার গাও।
আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানি,
খেলার দলে তারে নিয়েই সবার টানাটানি
রজারির গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,
‘শাল-সুন্দি-বেত’ যেন ও, সকল কাজেই লাগে
বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও, পাগাল লোহা যেন,
রূপাই যেমন বাপের বেটা, কেউ দেখেছ হেন?
যদিও রূপা-নয়কো রূপাই, রূপার চেয়ে দামি,
এক কালেতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামি।
একাধিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যারা নিয়মিত বই পড়েন তাদের গড় আয়ু বৃদ্ধি পায়। বই পাঠ মানুষকে সুখি করে তোলে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর আপনার নিজস্ব লাইব্রেরির নিভৃতে পছন্দের বই পড়ার সুখে ডুবে যাওয়া – এক পরম বা স্বর্গীয় শান্তির ব্যাপার। এ এক এমন জিনিস যা আপনার মানসিক প্রশান্তিকে উচ্চ স্তরে পৌঁছে দেয়। আপনার শারীরও সেই সুখের আবেশে অনেক সুস্থ-সবল হয়ে ওঠে। এই যে দেহমনের ও দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার জন্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা একান্ত জরুরী। এই প্রয়াসকে স্বার্থক করে তোলার জন্য ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বই সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা হল।
Please do not enter any spam link in the comment box