ভালো ঘুমের সহায়ক কোন কোন খাবার – Best Foods for Sound Sleep
গরম দুধ- রাতে শোবার আগে এক গ্লাস গরম দুধ খেলে ভালো ঘুম হয়। দুধে
উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ক্যালশিয়াম মস্তিস্কে Tryptophan গঠনে সাহায্য
করে – যা ভালো ঘুমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।
পান্তাভাত – জল দিয়ে সারা রাত ধরে রেখে দেওয়া বাসি ভাত হল পান্তাভাত। এই
পান্তাভাত প্রাকৃতিকভাবে দেহে ঘুমের বৃদ্ধিতে দারুন উপযোগী। এর মধ্যে উপস্থিত
শর্করা সারারাতে রেখে দেবার ফলে প্রাকৃতিকভাবে সন্ধান প্রক্রিয়ায় Fermented হয়ে যে মৃদু অ্যালকোহল সৃষ্টি করে তা ঘুমের
বৃদ্ধিতে খুব সহায়ক হয়। যদিও অনেকের রাতে পান্তাভাত খাওয়া অসুবিধাজনক, এবং
পান্তাভাত খাওয়ার প্রচলন আজকাল কমে গেছে তবুও সুযোগ থাকলে ও শারীরিক কোন অসুবিধা
না থাকলে, খেয়েই দেখতে পারেন, উপকার পাবেন।
পাকা আম – আমে থাকে প্রচুর পরিমানে মিনারেলস – যা মস্তিস্কের নিউরোন সমূহের
পুস্টিতে সাহায্য করে। তাছাড়া আমে থাকা Tryptophan আমাদের মস্তিস্কের নিউরো-ট্রান্সমিটারগুলিকে সক্রিয় করে।
এই নিউরো-ট্রান্সমিটারগুলির অন্যতম হল Seritonin – যা আমাদের মস্তিস্ককে শান্ত ও শীতল করে। ফলে দেহে ঘুমের
অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
আঙ্গুর –আমের মতই পাকা আঙ্গুরে থাকে প্রচুর পরিমানে ন্যাচরাল
কার্বোহাইড্রেটস – শরীরে ইনসুলিনের পরিমান বাড়ায়। আর এই ইনসুলিন অনেক বেশী পরিমান Tryptophan আমাদের মস্তিস্কে করিয়ে
ঘুমের জন্য দায়ী অন্যতম নিউরো-ট্রান্সমিটার সেরিটোনিনকে সক্রিয় করে। ফলে ঘুম ঘুম
ভাব আসে। এছাড়া আঙ্গুর বেশী পরিমান পেকে গেলে প্রাকৃতিকভাবে এতে উপকারী মৃদ্যু অ্যালকোহোলের
সৃষ্টি হয় – যা ভালো ঘুমের পক্ষে সহায়ক।
কলা – Magnesium ও Potassium নামক খনিজ পদার্থ আমাদের শরীরে পেশির এ সাহায্য করে। ফলে পেশির ক্লান্তি দূর হয় এবং
সহজেই ঘুম আসে। আর এই দুটো খনিজ পদার্থ কলায় প্রচুর পরিমানে বিদ্যমান থাকে। তাই
নিয়মিত কলা খেলে ভালো ঘুম হয়।
আলু ও মধু - Potassium নামক খনিজ পদার্থ আলু ও
মধুতে প্রচুর পরিমানে উপস্থিত থাকে। আর এই Potassium এর ঘাটতি শরীরে নিদ্রাহীনতার জন্য দায়ী। তাছাড়া আলু ও মধুর
মধ্যে থাকা ন্যাচরাল কার্বোহাইড্রেটস – শরীরে ইনসুলিনের পরিমান বাড়ায়। ফলে আমাদের
শরীরে ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি হয়।
খেজুর ও ডার্ক চকোলেট - গবেষণায় দেখা
গেছে যে, শরীরে Magnesium এর ঘাটতি নিদ্রাহীনতার
জন্য অন্যতম দায়ী। আর এই Magnesium এর ঘাটতি আমরা সহজেই খেজুর ও ডার্ক
চকোলেট থেকে মেটাতে পারি। তাই নিয়মিত খেজুর
ও ডার্ক চকোলেট খাওয়া ভালো ঘুমের পক্ষে
সহায়ক হয়।
নোট - অপরের আলোচিত যে সব খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ তারা অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে খাবার খাবার খাবেন বা এই সব খাবার এড়িয়ে যাবেন।
কাঠ বাদাম, আখরোট ইত্যাদি – বাদামের মধ্যে উপস্থিত Tryptophan মস্তিস্কে সেরিটোনিন ও মেলাটোনিন নামক হরমোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এই সেরিটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোনকে বলা হয় Biological Clock Hormone, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়া সমূহ সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রন করে। তাছাড়া বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে Healthy Fatty Acids যেমন - ALA, Omega-3 এগুলিও ভালো ঘুমের সহায়ক। কেননা এই সব Healthy Fatty Acids গুলি DHA-তে রুপান্তরিত হয় – যা মস্তিস্কের বিকাশে ও ঘুমের উন্নতিতে উপযোগী হয়। তাই নিয়মিত বাদাম খেলে ভালো ঘুম হয়।
ডিম – ডিমে পাওয়া যায়
প্রচুর পরিমানে Vitamin-d, আর এই Vitamin-d আমাদের মস্তিস্কের যে সব নিউরোন ঘুমকে নিয়ন্ত্রন করে
তাঁদের পুষ্টিতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত পরিমিত পরিমানে আমাদের ডিম খাওয়া একান্তই
উচিৎ আমাদের ভালো ঘুমের জন্য। তাছাড়া ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে
গুরুত্বপূর্ন খনিজ উপাদান, যেগুলি আমাদের স্নায়ুকোশের পুষ্টি ও সঠিক কার্যকলাপের
জন্য সমান গুরুত্বপূর্ন।
ক্যামোমিলা চা( Chamomile Tea) – রাগ,
বিষন্নতা, মানসিক অশান্তি দূর করে স্নায়ুতন্ত্রকে Relaxations দিতে ক্যামোমিলা চা অদ্বিতীয়। তাই Homoeopathy তে প্রচন্ড রাগ, জেদ বা একগুঁয়েমির ফলে উৎপন্ন শারীরিক কোণ সমস্যায়
ক্যামোমিলা ওষুধটি সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়। তাছাড়া মানসিক প্রসান্তির জন্য
ক্যামোমিলা চা পান আজকাল বহুল জনপ্রিয়। তাই ঘুমানোর আগে ২/১ ঘন্টা আগে এক কাপ
ক্যামোমিলা চা পান আপনার ঘুম গভীর করতে দারুনভাবে কার্যকারী হবে। তাই Try করে দেখতে পারেন।
লেটুস/ব্রাহ্মী/শুষনি শাক – লেটুস শাকে আছে প্রচুর পরিমান ল্যাকটুক্যারিয়াম,
যা ভালো ঘুমের পক্ষে সহায়ক। এছাড়া ব্রাহ্মী
ও শুষনি শাকের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদান আমাদের মস্তিস্কের পুস্টি ও বিকাশে খুবই
গুরুত্বপূর্ন। তাই নিয়মিত ব্রাহ্মী ও শুষনি শাক খেলে যেমন আমাদের স্মৃতি শক্তির
বৃদ্ধি হয়, তেমনি মস্তিস্কের নিউরোন সমূহ সুস্থ সবল থাকে। তাই ভালো ঘুমের জন্য
নিয়মিত লেটুস,ব্রাহ্মী,শুষনি ইত্যাদি শাক খাওয়া খুবই উপকারী।
উপরিউক্ত খাবারগুলি ছাড়াও ভালো ঘুমের জন্য আদর্শ পরিবেশ, ঘুমের জন্য নির্দিস্ট সময়কাল ও মানসিক প্রশান্তিও একান্ত
প্রয়োজন।
সবশেষে বলা যায়, ঘুম হল দেহের কোশের কোশের পুনঃসজীবতার একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। মানবদেহের নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গ ও তন্ত্র এই ঘুম নিয়ন্ত্রন করে। তাছাড়া বেশকিছু রাসায়নিক উপাদান, খনিজ পদার্থ, হরমোন, ভিটামিন ঘুম প্রক্রিয়ার সহায়ক হয়। যেমন- Magnesium, Calcium, Potassium, Copper, zinc, Vitamin-B6, Vitamin-C, Vitamin-D, Healthy Fatty Acids যেমন- Omega-3, ALA, DHA, Seritonin(ঘুমের জন্য দায়ী অন্যতম নিউরো-ট্রান্সমিটার), Melatonin নামক হরমোন, এছাড়াও Histamine, Triptophan, Folate, Anti-Oxidants, L-Ornithine, , Gama-Aminobutaric-Acid(GABA) নামক রাসায়নিক পদার্থ দেহে ঘুমের পক্ষে সহায়ক হয়।
তদুপরি আমাদের মনে রাখতে
হবে ব্যাক্তিভেদে ঘুমের ধরন, সময়কাল আলাদা আলাদা হতে পারে। সবার জন্য ঘুমের জন্য
একটি নির্দিষ্ট সূচক হতে পারেনা। শিশু, বৃদ্ধ বা রোগীরা অন্যদের তুলনায় একটু বেশি
সময় ধরে ঘুমান। কোন বয়সের মানুষের কেমন ঘুমের প্রয়োজন তার একটি মোটামুটি সাধারন
তালিকা নীচে দেওয়া হল –
- ৩ বছর পর্যন্ত শিশুদের 👉 দৈনিক ১০/১১ ঘণ্টা বা তার বেশি।
- ৩ থেকে ৫ বছর 👉 দৈনিক ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা
- ৫ থেকে ১২ বছর 👉 দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা
- ১৩ তেকে ১৭ বছর 👉 দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা
- ১৮ থেকে ২৫ বছর 👉 দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা
- ২৬ থেকে ৬০ বছর 👉 দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা
- ৬০+ বছর 👉 দৈনিক ৭/৮ ঘন্টা।
মনে রাখবেন এই তালিকাটি
একেবারে নির্দিষ্ট কোন তালিকা নয়। ঘুম বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও এবিষয়ে মতভেদ রয়েছে এবং
থাকাই স্বাভাবিক। কেননা স্থান, কাল, পরিবেশ এবং কর্ম বা পরিশ্রম ও ব্যাক্তিভেদে
বয়স অনুসারে ঘুমের ফারাক থাকাই স্বাভাবিক। এর থেকে কিছু সময় কম বা বেশি ঘুম হয়েও
আপনার শরীর বেশ Active and Fresh থাকতে পারে। কোন সমস্যা না হতেই পারে। তবে কোন সমস্যা হলে
অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে বিষয়টি সমাধান করা উচিৎ।
Disclaimer – ওপরের আলোচিত তথ্যসমূহ কোন ভাবেই কোন রোগ প্রতিরোধ বা চিকিৎসার উদ্দেশে নয়, বরং সাধারণ শিক্ষামুলক/তথ্যজ্ঞাপন মূলক(Educational/Informational) উদ্দেশে প্রকাশিত। এটি কোন চিকিৎসা পরামর্শও(Medical Advise) নয়। যেহেতু প্রত্যকেটা মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আলাদা তাই যেকোন খাদ্য/পানীয়/ব্যায়াম/বা অন্য কোন ব্যবহারের বস্তু একেকজনের শরীরে একেকরকম প্রভাব ফেলে। করো দেহে কোন উপকার সহজেই দেখা দেয়, আবার কারোর দেহে দেরিতে। আবার কারো শরীরে কোন প্রভাব ফেলে না, আবার কারোর শরীরে বিরূপ প্রভাবও ফেলে। তাই কোন খাদ্য/পানীয়/ব্যায়াম/বা শরীরে প্রয়োগের কোন দ্রব্য ব্যবহার করার সময় আগে আপনার চিকিৎসক বা Dietician বা Health Expert এর পরামর্শ অনুসারে করুন।
Please do not enter any spam link in the comment box