আপনার দাঁতের যত্নের সবথেকে নিরাপদ ও প্রাকৃতিক 10টি উপায় - 10 Safe and Natural Tips for Your Dental Care at Home
সবথেকে নিরাপদ ও প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে আপনার দাঁতের যত্ন নেবেন।
সুস্থ সবল শরীরের জন্য দেহের প্রতেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যত্ন নেওয়া জরুরী। তাই নিরাপদ উপায়ে ও প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে দাঁতের যত্ন কীভাবে নেবেন, দাঁতের যত্নে ভেষজ উপাদান, দাঁতের যত্নের সাধারণ Tips, দাঁতের হলুদ ছোপ কীভাবে দূর করবেন, দাঁতের যন্ত্রণার ঘরোয়া উপায়, দাঁত নড়ে গেলে কি করবেন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হল।
জানুন এবং ভাবুন –
🦷 যদি আপনার শরীর সুস্থ থাকে, দেহের প্রত্যেক তন্ত্রসমূহ সঠিকভাবে কাজ করে তবে আপনার পুষ্টি সঠিকভাবে হবে। ফলে আপনার দেহের লাবন্য, ত্বক, চুল, দাঁত সবই সুস্থ ও সুন্দর থাকবে। আর তা নাহলে অসুস্থতার চাপ পড়বে সর্বত্র। তাই আগে আমাদের ঠিক করতে হবে দেহযন্ত্রকে যতটা সম্ভব সুস্থ সবল করা।
🦷 দাঁতের গঠনে যেসব উপাদান থাক না কেন, সেগুলি আমাদের শরীর পুষ্টিরসের মাধ্যমে ভিতর থেকে সরবরাহ করে তাদের সুস্থ, সবল, সুন্দর ও কর্মক্ষম করে তোলে। আর যদি তা না হয় তাহলে সমস্যা দেখা দেয়। সেই সমস্যার সমাধানের জন্য সর্বপ্রথম দেহের ভিতর থেকে পুষ্টিরসের মাধ্যমে করতে হবে, বাইরে থেকে কোন কিছু প্রয়োগ করে নয়। না হলে স্থায়ী সমাধান হবে না।
🦷 দাঁতের যত্ন নেওয়া ও সমস্যার বিষয়টি দুই ভাবে দেখা যেতে পারে –
- আপনার দাঁত সুস্থ আছে, তবে কীভাবে যত্ন নেবেন।
- আপনার দাঁত ও মাড়ির কোন সমস্যা আছে তবে, কীভাবে প্রতিকার করে যত্ন নেবেন।
🦷 প্রথমটি আলচনার করার আগে দ্বিতীয়টির জন্য বলা যায়, এক্ষেত্রে আপনার সবথেকে বুদ্ধিমানের পদক্ষেপ হবে প্রথমেই আপনার Dentist কাছে যাওয়া এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী চলা। মনে রাখবেন দাঁতে কোন ক্যারিজ দেখা দেওয়া শুরু হলে Sealing বা Filling বা Capping বা Dentist এর পরামর্শ মত চললে এটা আটকানো যাবে। কোন দামি Toothpaste, কোন Herbs বা কোন ঘরোয়া উপায়েই এটা আটকানো যাবে না,যারা এমন দাবী করে তা সম্পূর্ণ হাস্যকর। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে ক্যারিজ বা সমস্যাটির কারন কি? দেখতে হবে আপনার মুখের Hygiene বা pH Balance ঠিক আছে কিনা? বা আপনার অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা, যা আপনার স্থায়ী সমাধানে সাহায্য করবে।
🦷এবার আসি আপনার যদি দাঁত ঠিক থাকে তবে তার যত্ন নেবার ব্যাপারে। এক্ষেত্রে আপনার সবথেকে বুদ্ধিমানের পদক্ষেপ হবে প্রাকিতিক ও নিরাপদ উপাদান দিয়ে দাঁতের যত্ন নেওয়া। যখন আপনার নিকটে প্রাকৃতিক, নিরাপদ ও কার্যকারী উপাদান রয়েছে তখন আপনি কে শুধু শুধু কেমিক্যাল যুক্ত উপাদান দিয়ে এর যত্ন নেবেন? মনে রাখবেন সব Toothpaste এমনকি Herbal Toothpaste তেও কমবেশি কেমিক্যাল থাকেই। তাই সবথেকে নিরাপদ উপায়ে দাঁত ও মাড়ির যত্ন নেবার জন্য নীচের উপাদান গুলি ব্যবহার করবেন, দেখবেন উপকার পাবেন।
1, নিমের দাঁতন –
🦷 দাঁতের যত্নে বহুল প্রচলিত, নিরাপদ এবং খুবই কার্যকারী উপায় হল নিমের দাঁতন ব্যবহার। এখনও গ্রাম-গঞ্জের বহু লোক সম্পূর্ন এর ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ইন্টারনেটের দৌলতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এর গুনগান। Online Store গুলিও বিক্রি করছে এটি। গ্রাম থেকে শত শত কচি নিমের ডাল চলে যাচ্ছে শহর ও তার উপকণ্ঠে। নিম প্রাকিতিক Anti-Bacterial যুক্ত হওয়াই সহজে জীবাণু দূর করে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। তাই দাঁতের যত্নের জন্য এটি আপনি বেছে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন খুব শক্ত ডালের দাঁতন ব্যবহার করবেন না, ব্যবহারের আগে ভালো করে চিবিয়ে নেবেন এবং সর্বদা কাঁচা ডালের দাঁতন ব্যবাহার করবেন।
2, নিমপাতা –
🦷 নিমপাতা প্রাকিতিক Anti-Bacterial গুন যুক্ত হওয়াই Ayurvedic শাস্ত্রে এর বহুল ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। মুখের দুর্গন্ধ, মাড়ির Problem, ঘা থাকলে কয়েকটি নিমপাতা ভালকরে চিবিয়ে মুখের মধ্যে রেখে দিন 4/5 মিনিট ধরে। সাথে সাথে কুলিকুচি করার মত করে সারা মুখের মধ্যে ঘোরাতে থাকুন তারপর ফেলে দিন। 10 /12 দিন করলেই আপনি নিজেই এর উপকারিতা বুঝতে পারবেন।
3, Sea Salt ও নারকেল তেল-
🦷 একচামচ পরিমাণ Sea Salt ও ভালো Edible নারকেল তেল একসাথে মিশিয়ে Paste এর মত করে নিয়ে ভালো করে দাঁত ও মাড়িতে ম্যাসাজ করতে হবে। লবন মাড়ির পক্ষে খুবই উপকারি এবং মুখের Hygiene বজায় রাখে। তাই আজকাল অনেক Toothpaste এ লবন ব্যবহার করা হয়। Sea Salt বিভিন্ন Online Store থেকে জোগাড় করে নেবেন।
4, Baking Soda এর ব্যবহার –
🦷 ঘরের একটি সাধারণ ব্যবহারের জিনিস বেকিং সোডা আপনার দাঁতকে করে তুলতে পারে মুক্তোর মত ঝকঝকে সাদা। অতিরিক্ত চা-কফি এবং কোলা জাতীয় Soft Drinks পানের ফলে দাঁতে যে ছোপ পড়ে তা সহজেই তুলে দিতে পারে এই বেকিং সোডা। ভালো মানের নারকেলের তেলের সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে আঙুল, নিমের দাঁতন বা নরম কোন ব্রাশের সাহায্যে 2/3 মিনিট হালকা করে ঘষুন, কয়েকদিন পরই আপনি এর তফাত বুঝতে পারবেন। এটা নিয়মিত বা সপ্তাহে তিনদিন করলেও কোন ক্ষতি হবে না।
5, হলুদ গুড়ো, সাধারণ লবণ এবং লবঙ্গ তেলের মিশ্রণ –
🦷 এক চামচ পরিমাণ হলুদ গুড়ো, এক চিমটে লবন ও 1/2 ফোঁটা লবঙ্গ তেল সামান্য জলের সাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট করুন। এরপর আঙুল এ ওই মিশ্রণ নিয়ে আপনার দাঁত ও মাড়িতে আস্তে আস্তে ঘষুন। তারপর সামান্য গরম জলে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে 3/4 দিন এটা করতে হবে। এর ফলে আপনার দাঁতের এনামেল ঠিক থাকবে, ক্যারিজ হওয়া রোধ করবে এবং দাঁতের হলুদ ছোপ কেটে যাবে।
6, Oil Pulling -
সূর্যমুখী, নারকেল বা তিল যে কোন এক প্রকার তেল এক টেবিল চামচ পরিমাণ নিয়ে বাসিমুখে সকালে মুখের মধ্যে দিয়ে অনবরত নাড়তে বা ঘোরাতে হবে। কুলকুচি করার সময় জল যেভাবে আমরা মুখে ঘোরায় সেভাবে 5 - 10 – 15 - 20 পারলে 30 মিনিট ধরে এটা করতে হবে। তেল গিলে নিলে হবে না। তারপর যখন আপনি ফেলে দেবেন দেখবেন এটি সাদ দই এর মত হয়ে গেছে। এভাবে অনবরত ঘোরানোর ফলে তেল আপনার দাঁতের ফাঁকে বা Oral Cavity এর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, ফলে জীবাণুর সংক্রমণ থাকেল তা সহজেই দূর হয়। অনেক চিকিৎসক দাবী করেন এভাবে Body-Detox বা শরীর থেকে Toxin দূর করা যায়। সে যাই হোক না কেন দাঁত ও Oral Cavity যত্নের ক্ষেত্রে এবং দাঁতকে সাদা করতে নিরাপদ ও কার্যকারি একটি পদ্ধতি হল Oil Pulling.
তবে খেয়াল রাখবেন তেল যেন ভোজ্য (Edible) তেল হয়, অর্থাৎ যে তেল রান্নার কাজে ব্যবাহার হয়। সব থেক ভালো হয় Organic Cold Pressed তেল ব্যবহার করা।
7, মেথি বীজের পাউডার –
🦷 দাঁতের যত্নে অন্যতম প্রাকিতিক, নিরাপদ এবং উপযোগী উপাদান হল মেথি বীজের পাউডার। মেথি সামান্য ভেজে নিয়ে Mixture Grinder এ মিহি করে গুড়ো করে নিন। খোঁজ করলে আপনি মেথি বীজের পাউডার যে কোন লোকাল Store বা Online Store এ খুব সামান্য দামে পেয়ে যাবেন। Organic 24 Mantra কোম্পানির পাউডারটি Try করে দেখতে পারেন, খুব ভালো। এই পাউডার একটু নারকোল তেলের সাথে মিশিয়ে Paste করে আঙ্গুলের সাহায্যে দাঁতের ওপর নীচ হালকা করে ম্যাসেজ করে নিন, খুব ভালো উপকার পাবেন।
মনে রাখবেন দেহ আপনার, তাকে নিরাপদ পথেই যত্ন নেওয়া উচিৎ।
8, দাঁত ও মাড়ির ছোটখাট সমস্যায় পরিচিত কয়েকটি ভেষজের ব্যবহার –
🦷 মুখে দুর্গন্ধ হলে 5/6 টি তুলসি পাতা ভালো করে চিবিয়ে রসটি কিছুক্ষণ মুখের মধ্যে রেখে দিন। সপ্তাহে 3/4 দিন এটা করতে হবে।
🦷 দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথাতে বাবলা বা বাবুলের পাতা চিবিয়ে রসটি দাঁতের গোড়ায় রেখে দিন। ফোলা ব্যথা কমে যাবে এবং দাঁতের গোড়াও মজবুত হবে।
🦷 কচি পেয়ারার পাতা চিবিয়ে রস মুখের মধ্যে রেখে মাড়ির কোন সমস্যা, ফোলা ব্যাথা ইত্যাদির উপশম করে। মনে রাখবেন বর্তমানে চিকিৎসকরা আমাদের ক্লোরোফিল নিয়মিত গ্রহন করার কথা বলছেন।
🦷 মাঝে মধ্যে একটি আমলকী খেলে মাড়ির অনেক উপকার হয়। রক্ত পড়া বন্ধ হয়। আমলকী তে থাকা Vitamin-C স্কার্ভি প্রতিরোধ করে।
9, দাঁতের যন্ত্রনা ও তার ঘরোয়া প্রতিকার –
🦷 দাঁতের যন্ত্রনায় ঘরোয়াভাবে নিরাপদ দু-একটি উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে।
- লবঙ্গ তেল – এই তেল দুই এক ফোঁটা নিয়ে আঙুলে করে অথবা কটন বার্ডসের ওপর রেখে সমস্যা হওয়া দাঁতে লাগালে যন্ত্রণার উপশম হয়।
- প্লান্টাগো Mother Tincture – এটি একটি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, দাঁতের যন্ত্রণায় খুব কার্যকারী ও নিরাপদ। লবঙ্গ তেলের মতই একইভাবে ব্যবহার করতে হয়।
Note - এখানে উল্লেখ করা যায় এগুলি কয়েকদিন ব্যবহারের পরও যদি যন্ত্রনার উপশম না হয় অথবা ফিরে ফিরে আসে বা স্থায়ী উপশম না হয় তবে অবশ্যই আপনাকে এর পরামর্শ নিতে হবে।
10, নড়া দাঁত ঠিক করতে –
🦷 আঘাত, পড়ে যাওয়া বা অন্য কোন কারনে কোন দাঁতের গোড়া আলগা হয়ে গেলে বা নড়তে থাকলে বায়োকেমিক ওষুধ Calceria Flour 12X 4টি করে Tablet দিনে 4 বার 15/20 দিন খেলে নড়া দাঁত ভালো হয়ে যায়। এছাড়া ওষুধটি দাঁতের এনামেল রক্ষা করে দারুন উপযোগী, এর কোন Side Effect নেই। তেমন হলে আপনার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে পারেন।
🦷 এক নজরে 🦷
- রাতে খাবার পড় অবশ্যই দাঁত ও মুখ ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে, যাতে কোন খাদ্যকণা আটকে না থাকে।
- কচি, নরম ও কাঁচা নিম ডালের দাঁতন ব্যবহার করা প্লাস্টিকের ব্রাশের থেকে অনেক ভালো। যদি একান্তই না পারেন তবে শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।
- নরম Bristle যুক্ত ব্রাশ ব্যবহার করবেন এবং তিন মাস অন্তর ব্রাশ পাল্টে ফেলবেন।
- রাতে শোবার আগে যদি ব্রাশ করেন সকালে উঠে আর করার দরকার নেই। এই সময় ওয়েল পুলিং করতে পারেন। সকালে নাস্তা খাবার পর ব্রাশ করে তারপর কাজে যোগ দিন।
- দাঁতের সমস্যা থাক বা না থাক বছরে দুই বার আপানার Dentist কাছে চেক-আপ করিয়ে নিন।
- খসখসে (Abrasive) কোন উপাদান, শক্ত ব্রাশ, বা শুকনো শক্ত দাঁতন দিয়ে দাঁত মাজবেন না, এতে আপনার দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হতে পারে।
Please do not enter any spam link in the comment box